স্বাদে-গুণে অনন্য ‘হাঁড়িভাঙা’ আম

স্বাদে-গুণে অনন্য রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সুস্বাদু এই আমের সুখ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ এলাকা হাঁড়িভাঙা আমের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এ আমের চাষ।

বর্তমানে হাঁড়িভাঙা আমে বাজার সয়লাব। প্রতি কেজি আম ৯০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বিভিন্ন প্রজাতের আম থাকলেও হাঁড়িভাঙা আমের প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি।

হাঁড়িভাঙা আমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমটিতে কোনো আঁশ নেই। বড় ও ছোট দুই ধরনের আমই খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু এবং এর ঘ্রান খুব চমৎকার। ছোট থেকে পাকা পর্যন্ত একেক স্তরে একেক স্বাদ পাওয়া যায়।

এই আমের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- পাকার পরও এর চামড়া অনেকটা শক্ত থাকে। দেখে সহজে বোঝার উপায় নাই আম পেকে গেছে। তবে এ অবস্থাতে খেলে হাঁড়িভাঙা আমের প্রকৃত স্বাদটা পাওয়া যায়।

আর বেশি পাকলে বা চামড়া অনেক নরম হয়ে গেলে এই আমের স্বাদে তারতম্য ঘটে। যে কারণে এই আম সম্পর্কে যারা জানেন, তারা ভুলেও বেশি পাকা আম কেনেন না। কারণ পাকার পর এই আম বেশি সময় সংরক্ষণ করা যায় না।

হাঁড়িভাঙা আমের আকার আকৃতিও অন্য আমের চেয়ে আলাদা। আমটির উপরিভাগ বেশি মোটা ও চওড়া, নিচের অংশ অপেক্ষাকৃত চিকন। আমটি দেখতে সুঠাম ও মাংসালো, গোলাকার ও একটু লম্বা। আমের তুলনায় আঁটি অনেক ছোট।

আকারের তুলনায় অন্য আমের চেয়ে ওজনে বেশি, গড়ে তিনটি আমে এক কেজি হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি আম ৫০০/৭০০ গ্রাম হয়ে থাকে।

এ আমটি শুধুমাত্রই রংপুরের। রংপুরের বাইরে কোথাও এই আমের চাষাবাদ-ফলন খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না এখন পর্যন্ত।

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার পদাগঞ্জ গ্রামে সর্বপ্রথম হাঁড়িভাঙা আম চাষ করে স্থানীয় লোকজন। আস্তে আস্তে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য এলাকায়। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রামে হাজার হাজার বাগানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁড়িভাঙা আম চাষ হচ্ছে।

হাঁড়িভাঙা আমের নামকরণ হলো যেভাবে

বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জমিদার বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধি ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল। রাজা তাজ বাহাদুর শিংয়ের আমলে এই বাগানটি করা হয়েছিল। বাগানে রোপন করা অনেক ফুল ও ফল বিদেশ থেকেও আমদানি করা হয়েছিল।

ওই সময় ১নং খোরাগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের মৃত নফল উদ্দিন পাইকার আমের ব্যবসা করতেন। তিনি জমিদারের বাগানসহ অন্য আম চাষীদের আম পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন।

জমিদার বাগানের আমদানিকৃত আমের মধ্যে একটি আম অত্যন্ত সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও দর্শনীয় হওয়ায় তিনি ওই আমটির একটি কলম (চারা) নিয়ে এসে নিজ জমিতে রোপন করেন।

বরেন্দ্র প্রকৃতির জমি হওয়ায় শুকনো মৌসুমে গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার সুবিধার্থে একটি হাড়ি বসিয়ে ফিল্টার পদ্ধতিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন তিনি।

কিন্তু অল্পদিনের ব্যবধানে কে বা কারা ওই হাড়িটি ভেঙে ফেলেন। তবে এক সময় আম গাছটি ফলবান বৃক্ষে পরিণত হয় ।

মৃত নফল উদ্দিনের পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও ভোক্তারা ওই গাছের আম খাওয়ার তার উৎস সম্বন্ধে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, কে বা কারা যে গাছটির হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছিল এটি সেই গাছেরই আম।

গাছকে সনাক্তকরণের লক্ষ্যে নফল উদ্দিন কর্তৃক উচ্চারিত বা মুখ নিঃসৃত হাঁড়িভাঙা কথার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে এটি ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ নামে পরিচিত লাভ করে।  

 

টাইমস/জেডটি

Share this news on: