পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আয়োজিত তাজিয়া মিছিলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মিছিল এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী ও বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার (জেনারেটর) ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপি জানিয়েছে, মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি, ব্যাগ, বিভিন্ন সুইটকেস বা সন্দেহজনক কোনো প্যাকেট ইত্যাদি এবং আতশবাজি বা পটকা ব্যবহার করতে পারবেন না।
ইমামবাড়া ও মিছিল আয়োজনকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি থেকে বলা হয়েছে, আশুরার নানা অনুষ্ঠান ও তাজিয়া মিছিলে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী বা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করে যেন পুলিশি নিরাপত্তা জোরদারে সহযোগিতা করা হয়।
বৃহস্পতিবার(৩ জুলাই) বেলা ১১টায় লালবাগ হোসাইনি দালান ইমামবাড়ায় পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে ডিএমপির নিরাপত্তা পরিকল্পনা সংক্রান্ত আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার। তিনি বলেন, হোসনি দালান ইমামবাড়া, বড়কাতরা মাহমুদপুর বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারি ক্যাম্পসহ যেসব স্থানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র আশুরা পালিত হয় সেসব স্থানে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয়ভাবে সব বিভাগ কর্তৃক শিয়া ধর্মাবলম্বীসহ সব ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা করা হয়েছে। ইমামবাড়ার আশেপাশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় চেকপোস্ট কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ইমামবাড়ার আশেপাশে পার্শ্ববর্তী উঁচু ভবন থেকে ইতোমধ্যে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পুলিশ উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা পালন করছে।
ইমামবাড়া থেকে অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনিটরিং বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সব অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশ মুখে আর্চওয়ে গেট স্থাপন, হ্যান্ডমেটাল ডিটেক্টর দ্বারা তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তল্লাশির মধ্য দিয়ে আগত সবাইকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, নারীদের তল্লাশির জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী সদস্য মোতায়েন থাকবে। অনুষ্ঠান সমূহের স্থির ও ভিডিও চিত্র ধারণের ব্যবস্থা থাকবে। ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি আমাদের সাদা পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।
অস্থায়ী কারবালা ধানমন্ডি লেকে থাকবে বিশেষজ্ঞ দল
ধানমন্ডি লেকে অস্থায়ী কারবালায়, ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও মেডিকেল টিম প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিসহ উপস্থিত থাকবেন। বোমা, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল, সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকবেন।
নিষিদ্ধ সংগঠন-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
নিষিদ্ধ সংগঠন বা অন্যান্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে সাইবার ক্রাইম ইউনিট মনিটরিং করবে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ও সেবা সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শব্দ দূষণরোধে ঢোল-মাইক ব্যবহারে নিরুৎসাহ পুলিশের
শব্দ দূষণ করে এমন উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী ঢোল, মাইক ব্যবহার করে নগরবাসীর ভোগান্তি দেওয়া যাবে না। সুশৃংখলভাবে মিছিলে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাজিয়া মিছিল শেষে স্ব-স্ব গন্তব্যে ফিরে যেতে হবে সুশৃঙ্খলভাবে। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে সেজন্য সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুই বা ততোধিক হলে গ্যাপ রেখে মিছিলে অংশ নিতে হবে। লোডশেডিং হতে পারে, সেজন্য বিকল্প হিসেবে জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখলে ভাল হয়। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে ৯৯৯-এ জানানো বা ডিএমপিকে জানাতে পারেন।
মূলত: ২৫ টা মিছিল হচ্ছে ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত। ৪, ৫ ও ৬ জুলাই এই তিনদিনে মোট ৫০টা মিছিল হবে। ৪ জুলাই ১১টা, ৫ জুলাই ১৭, ৬ জুলাই ১৯টা মিছিল হবে।
ট্রাফিক ব্যবস্থা
ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, হোসনি দালান ইমামবারা থেকে তাজিয়া মিছিল শুরু হয়ে নীলক্ষেত মিরপুর রোড ঢাকা কলেজ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ধানমন্ডি আবাসিক লেক চার নাম্বার গেট সাত মসজিদ হয়ে ধানমন্ডি লেকে অস্থায়ী কারবালা মিলিত হবে। এই অস্থায়ী কারবালা লেকে অনেকগুলো মিছিল মিলিত হবে। সেজন্য এইসব এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। রোড ডাইভারশন করা হবে অন্যান্য রাস্তায় যান চলাচল করতে পারবে।
সাধারণ নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাজিয়ার মিছিল চলাকালে সংশ্লিষ্ট রাস্তা পরিহার করে অন্য রাস্তায় চলাচল করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্), এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ১০ মহররমের অনেক গুরুত্ব। আগামী ৫ জুলাই উল্টো রথযাত্রা আছে। ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে উল্টো গিয়ে স্বামীবাগে ইস্কন মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে। সেজন্যও থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।