নরসিংদীর শিবপুরের উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. হারুনুর রশিদ খান হত্যামামলার আসামিকে ইন্টারপোলের রেড এলার্টের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করেছে দুবাই পুলিশ। পরে দুবাই পুলিশের বার্তা পেয়ে ওই আসামিকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতে সোপর্দ করেছে পিবিআই।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) পিবিআই সদর দফতর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ওই আসামির নাম মহসীন মিয়া। পিবিআই জানিয়েছে, গত ২০ জুলাই দুপুরে তাকে নরসিংদী আদালতে হাজির করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মো. হারুনুর রশিদ খান দীর্ঘ ২৫ বছর শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ার পর তার বাসভবনে এলাকার লোকজনদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। বিরোধের কারণে আসামিরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সেই মতে মামলার ১নং আসামি আরিফ সরকার ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে একটি বিদেশি নাম্বার দিয়ে হারুনুর রশিদ খানকে ফোন করে বলেন, ‘আমি বিদেশে চলে এসেছি এবং আগামীকাল মহসীন মিয়া আপনার কাছে মসজিদের অনুদানের জন্য কিছু টাকা নিয়ে আসবে।’
জানা গেছে, তখন হারুনুর রশিদ খান তাকে পরেরদিন সকালে আসতে বলেন। পরদিন সকাল সোয়া ৬টার দিকে মামলার ২নং আসামি মহসীন মিয়া একটি মোটরসাইকেল যোগে দুটি পিণ্ডলসহ দুইজন শুটার নিয়ে হারুনুর রশিদ খানের বাসভবনের নিচে গিয়ে তাকে ফোন করে বলেন, ‘আরিফ আমাকে মসজিদের অনুদানের জন্য কিছু টাকা দিয়ে পাঠিয়েছে এবং আমি আপনার বাসার নিচে আছি।’ হারুনুর রশিদ খান তখন মহসিন মিয়াকে তার বাসভবনের ৩য় তলার ড্রয়িং রুমে এসে বসতে বলেন এবং ড্রয়িং রুমের দরজা খুলে দেন। হারুনুর রশিদ খান ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আসামিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং বলেন, ‘তোমরা বস, আমি তোমাদের জন্য একটু ফল কেটে নিয়ে আসি।’ এই কথা বলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই দুইজন শুটার হারুনুর রশিদ খানের কোমড়ে দুই রাউন্ড গুলি করে ৩য় তলা থেকে দৌড়ে নেমে মোটরসাইকেল দিয়ে পালিয়ে যায়।
পিবিআই জানিয়েছে, মামলার অপর আসামি হুমায়ুন একটি প্রাইভেটকার নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। হারুনুর রশিদ খানকে গুলির পর তারা সবাই প্রাইভেটকার দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশের বাহিরে চলে যান। পরে হারুনুর রশিদ খান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় তার ছেলে বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানার মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পিবিআই এই মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর জহিরুল ইসলাম শরীফ মোল্লা নামে একজনকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার করে। পরে জহিরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তিনি জানান, মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে তার হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়েছে। আসামি আরিফ সরকারের পরিকল্পনায় মহসীন মিয়া, ইরান মোল্লা ও মোবারক ভিকটিমকে তার বাসভবনে গুলি করে এবং হুমায়ুন একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে তাদেরকে আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছে দেয়। আসামিরা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে।
ইউটি/টিএ