একসময় সংকট ছিল বাফুফের নিত্যদিনের সঙ্গী। সেই সংকটের মাঝেই শুরু নারী ফুটবলের পথচলার। বাফুফের সংকটের মেঘ কাটতে শুরু করেছে, ধরা দিচ্ছে সাফল্যও। সেই সাফল্যের সিংহভাগই অবশ্য এসেছে মেয়েদের হাত ধরে। নারী ফুটবল এগিয়ে যাচ্ছে অবিশ্বাস্য গতিতে।
বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ নারী ফুটবলের সংকট ও সীমাবদ্ধতা যেমন দেখেছেন, তেমনি সেগুলো মোকাবিলাও করেছেন। ২০১৬ সালে দেশের প্রথম নারী হিসেবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন মাহফুজা আক্তার কিরণ। নারী উইংয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার সামনে ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ। সে সময় নারী ফুটবলারদের অনুশীলন ব্যবস্থা এতটা আধুনিক ছিল না; বেশিরভাগ সময়ই অনুশীলন করতে হতো টার্ফে। এমনকি বাফুফের কোনো স্থায়ী জিমনেশিয়ামও ছিল না।
নারী ফুটবলের উন্নয়নে কিরণ এগিয়ে আসেন এবং সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পরিস্থিতি সামাল দেন। তবে, বিতর্কও তার পিছু ছাড়েনি। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই কিরণকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানা ঝড়ঝাপ্টা। গত ৯ বছরে তিনি যেমন নারী ফুটবলের সংকট দেখেছেন, তেমনি নিজেও পার করেছেন সংকটময় মুহূর্ত । তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, পদত্যাগের চাপ এসেছে, এমনকি খাটতে হয়েছে জেল।
২০১৯ সালের ৮ মার্চ, মাহফুজা আক্তার কিরণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি মন্তব্য করেন, যার কারণে তাকে কারাবরণ করতে হয়। কিরণ বলেছিলেন, 'পিএম (প্রধানমন্ত্রী) হিসাবে সব খেলাই তার কাছে সমান। তিনি কেন দু’চোখে দেখবেন? মেয়েরা ব্যাক টু চ্যাম্পিয়ন। গিফট তো পরের কথা, অভিনন্দন তো দিতে পারেন। মিডিয়াতে কি কোনো অভিনন্দন জানিয়েছেন?' এই বক্তব্যের জের ধরে তাকে অন্তত পাঁচ দিন হাজতবাস করতে হয়। পরে ২০১৯ সালের ২০ মার্চ ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন পান তিনি।
সংকট মোকাবিলা করে আসা কিরণ এখন নারী ফুটবলের সাফল্য উপভোগ করছেন। বয়সভিত্তিক থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে মেয়েরা এনে দিয়েছে অভূতপূর্ব সাফল্য-জাতীয় দলের টানা দুটি সাফ জয়, এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন, ফিফা র্যাংকিয়ে ঐতিহাসিক সাফল্য, সামনে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকে খেলার সুযোগ, এবং বিদেশি লিগে বাংলাদেশের মেয়েদের চাহিদাও তুঙ্গে।
নারী ফুটবলের এই ধারাবাহিক সাফল্যের মূল অবদান কার-কোচ পিটার বাটলারের? এমন প্রশ্নে ৯ আগস্ট (শনিবার) গণমাধ্যমকে অবাক করা উত্তর দেন কিরণ। তিনি বলেন, 'শুধু পিটার বাটলার নয়, এত বছর ধরে আমরা যে ক্যাম্প করে আসছি, সেটাও। সবারই অবদান আছে। আমি ভুলে যাব না আরেকটি নাম-পল স্মলি। তিনি কিন্তু বীজ বপন করেছিলেন। ২০১২ সাল থেকে আমরা মেয়েদের দীর্ঘ সময় অনুশীলনে রেখেছি, তখন থেকেই পল স্মলি আমাদের সঙ্গে ছিলেন।
খেলোয়াড়দের তিনি গড়ে তুলেছেন। পলকে ধন্যবাদ দিতে চাই, আর তখনকার কোচ ছোটন ভাইকেও ধন্যবাদ জানাই।'
তিনি আরো বলেন, 'পিটার কিন্তু রেডিমেড জিনিস (খেলোয়াড়) পেয়েছেন, তিনি কিছু তৈরি করেননি। রেডিমেড জিনিস নিয়েই কাজ করছেন। তবে আমি তাকে ছোট করছি না, তার নানা ধরনের কৌশল দিয়ে তিনি শেখাচ্ছেন, এ জন্য অবশ্যই তার কৃতিত্ব আছে। কিছু খেলোয়াড় তৈরি করছেন, এটাও তার কৃতিত্ব। আসলে এটি একটি প্যাকেজ-সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক ক্যাম্পেরই ফল নারী ফুটবলের এই সাফল্য।'
এর আগে কিরণ নারী ফুটবলে বাফুফের সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিনের অবদান ও বর্তমান সময়ে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের দূরদর্শী নেতৃত্বের কথাও উল্লেখ করেছেন। তবে নারী ফুটবল উন্নয়নে মুখ ফুটে নিজের শ্রম, মেধা ও অবদানের কৃতিত্বের কথা তাকে তেমন একটা বলতে শোনা যায়নি।
টিকে/