রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের দুদিন পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার (১৭ আগস্ট) তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার বিষয়ে বড় অগ্রগতি, সঙ্গেই থাকুন।’ তবে কী অগ্রগতি হয়েছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্পের এই পোস্টের কিছুক্ষণ আগেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন।
ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে দুই নেতার আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। রুবিও বলেন, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে যা ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য অগ্রগতির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
তাৎক্ষণিক সমাধানের আশা না করার বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না যে, আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে আছি।
তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকের ন্যায্যতা প্রমাণ করার জন্য আমরা যথেষ্ট পদক্ষেপ দেখেছি।’ রুবিও আরও সতর্ক করেন যে, যদি একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছনো না যায়, তাহলে রাশিয়াকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।
রুবিও আরও বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। কিন্তু সাফল্যের নিশ্চয়তা নেই। সিবিএসের ফেস দ্য ন্যাশনকে এক সাক্ষাৎকারে রুবিও বর্তমান পরিস্থিতিতে কূটনীতির সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘যদি এখানে শান্তি সম্ভব না হয় এবং এটি কেবল যুদ্ধ হিসেবেই চলতে থাকে, তাহলে হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে থাকবে।
দুর্ভাগ্যবশত আমরা হয়ত সেখানেই শেষ হয়ে যাব। কিন্তু আমরা সেখানেই শেষ হতে চাই না।’
এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আগামী সোমবার (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউসে এই বৈঠক হওয়ার কথা। তবে এবার জেলেনস্কি হোয়াইটে একা যাচ্ছেন না। একেবারে দলবল গুছিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে জেলেনস্কির সঙ্গে যোগ দেবেন ইউরোপীয় নেতারাও।
বিবিসির প্রতিবেদন মতে, ইউরোপীয় নেতারা বলেছেন যে, সোমবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির বৈঠকে তারাও যোগ দেবেন। এই দলে যারা থাকবেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন এবং ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট।
এছাড়া জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার স্টাবও জেলেনস্কির সাথে হোয়াইট হাউসে যাবেন বলে জানা গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেন ট্রাম্প।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মার্কিন ও রুশ প্রেসিডেন্টের মধ্যে এটাই প্রথম বৈঠক। কোনো চুক্তি ছাড়াই প্রায় তিন ঘণ্টার এই বৈঠক শেষ হয়।
তবে উভয় পক্ষই এই বৈঠককে ‘খোলামেলা’ ও ‘গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করে। পুতিনের বৈঠকের আগে ইউক্রেনে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করাই ছিল ট্রাম্পের অন্যতম মূল দাবি। কিন্তু বৈঠকের পর এখন তিনি বলছেন, যুদ্ধবিরতি নয়, সরাসরি একটি শান্তি চুক্তি চান যাতে সংঘাত চিরতরে বন্ধ হয়।
ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের ফলাফলের ব্যাপারে সতর্কতার সাথে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে কিয়েভ ও ইউরোপের উদ্বেগ হলো, রাশিয়ার সাথে শান্তি চুক্তির জন্য ট্রাম্পের চাপ জেলেনস্কিকে প্রতিকূল শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করতে পারে।
আর এ কারণেই ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে জেলেনস্কিকে একা ছাড়ছেন না ইউরোপীয় নেতারা। তাছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে ওভাল অফিসে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধ করাও তাদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
এমআর/এসএন