নুসরাত জাহান আর বিতর্ক যেন একই পথের পথিক— গেল কয়েক বছর ধরে এমনটাই তার ক্যারিয়ার গ্রাফ। পান থেকে চুন খসলেই তাকে নিয়ে শুরু হতো বিতর্ক। তবে এসব নিয়ে এতদিন মুখ খোলেননি অভিনেত্রী। এবার এক সাক্ষাৎকারে সেসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
তার ভাষ্যে, নুসরত মানেই বিতর্ক— আমাকে এভাবে দেখা হতো। আমি তার চেয়ে একটু বেশি। যারা বিতর্ক বা সমালোচনা করছেন, তারা আমার সমস্যার কথা জানেন না। আর যা বলা হয় তার বেশির ভাগই অর্ধসত্য।
তবে কঠিন পরিস্থিতি পেরিয়ে এখন যেন সহজ জীবনের দেখা পেলেন নুসরাত। বললেন, মনের জোর শতগুণ বেড়ে গেছে।
এক সন্তানের বাবা যশের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে সেভাবে কিছু না বললেও সাংসদ হওয়ার পর তার বিয়ে নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। এমন খবরও ছড়িয়েছিল, বিয়ে করেও সংসদে গিয়ে বলছে বিয়ে করেননি।
নুসরাত বললেন, ‘যশের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর সময়েই আমি জানতাম, যশ এক সন্তানের বাবা। হ্যাঁ, পরিস্থিতি বুঝতে, চিনতে সময় লাগে। সেই সময়টা নিয়েছিলাম। একসময় খবর হয়েছিল নুসরাত বিয়ে করে বলেছে বিয়ে করেনি। আগে কোনো দিন এই বিষয়ে কথা বলতে চাইনি।
আজ বলছি। আমাকে ভুল বোঝা হয়েছিল। আমি কিন্তু এই কথা একবারও বলিনি। আমি কি মূর্খ? বিয়ে করে সংসদে গিয়ে ঘোষণার পরে বলব, বিয়েটাই হয়নি! তাহলে আমার তো পাগলাগারদ থেকে ঘুরে আসা উচিত ছিল।’
এ প্রসঙ্গে আরো বললেন, অতীত খুঁড়তে চাই না। তবে পরিষ্কার করতে চাই সব ধোঁয়াশা। ওদের তরফ থেকে আইনি চিঠি এসেছিল। যেখানে বলা হয়েছিল, আইনসিদ্ধ বিয়ে নয় বলে এটাকে বিয়ে হিসেবে ধরা হবে না। এই কথাটাই হয়তো আমি সঠিকভাবে মানুষকে বোঝাতে পারিনি। এত কিছু হলো, গোটা ভারত যা দেখল সেটা সত্যি নয়, তা আমি কী করে বলতে পারি! এটা বলিওনি। আইনসিদ্ধ হোক বা না হোক বিয়ে তো করেছিলাম।
সময় ছিল না বলে বিয়ের রেজিস্ট্রি করেননি যশ-নুসরাত, এমনটা জানিয়ে অভিনেত্রী বলেন, সময় ছিল না। বাইরে বিয়ে হয়েছিল। ফিরেই সংসদে শপথ নেওয়ার কথা ছিল। একের পর এক কাজের মাঝে সময় বয়ে গিয়েছিল। আমারই ভুল! পাঠককে পুরো বিষয়টা আমি বুঝিয়ে বলতে পারিনি। এটা তো ঠিক, অতীতকে জীবন থেকে কোনো দিন মুছে ফেলতে পারব না।
বিয়ের প্রসঙ্গ ছাড়া তিনি কথা বলেছেন রাজনীতি নিয়েও। রাজনীতি থেকে কি নিজেই সরে এলেন, নাকি বাধ্য হয়েছিলেন, এমন প্রশ্নে নুসরাত বলেন, নিজের একশো ভাগ দিয়েছিলাম। সেই সময়, নির্বাচনের ঠিক ছ’মাস আগে অনেক বড় কাণ্ড হল। অনেক অভিযোগ করা হল। বলা হলো, আমি মানুষকে ঠকিয়েছি! মানুষকে ঠকাতে যাব কেন? আশ্চর্য! পরিণত নুসরত জানে, সে দিন কেন ওই কথা বলা হয়েছিল। আমি এই রেষারেষির মধ্যে আর পড়তে চাইনি। গোটা পরিস্থিতি একা সামলেছি। যশ তখন মুম্বাইয়ে। ঈশান ছোট। ঈশানকে দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
আর নয়। কিছু দিন পরে ছেলে তো বড় স্কুলে যাবে। ওর নিজের জগৎ তৈরি হবে। চাই না,আমার জন্য ওর উপর কোনও প্রভাব পড়ুক। ২০১৭ সালে টাকা ফেরত দেওয়ার পর ২০২৩ সালে হঠাৎ আমার দিকে আঙুল তোলা হল কেন? সেন্ট্রাল এজেন্সির দফতরে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গিয়েছিলাম। আমার কাগজপত্র সব ঠিক ছিল। সবার আমাকে নিয়ে এত উত্তেজনা কেন, বুঝতে পারি না। যারা সরাসরি যুক্ত তাদের কোনো দিন ডাক আসে না। তবে এটা ঠিক এই পরিস্থিতি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।
২০২৬ সালের নির্বাচনে যদি আবার ডাক আসে তবে যাবেন কি না, এমন প্রশ্নে অভিনেত্রী বলেন, তৃণমূল ডাকবে, না বিজেপি ডাকবে আমি জানি না। ডাক এলে কী করব সেটাও জানি না।
আমার রাজনীতিতে আসার মূল কারণ ছিল দিদি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত ভাবে খুবই শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। উনি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সবাইকে স্নেহ করেন। আমাদের আগলে রাখেন। দিদিকে কখনও ‘না’ বলতে পারব না। শেষ নির্বাচনের আগেও কথা হয়েছে দিদির সঙ্গে। উনার অজান্তে কিছু করিনি। সেটা আমাকে সবার সামনে বলতে হবে তার কোনও বাধ্যবাধকতাও নেই। যে কথাই বলি, তার ব্যাখ্যা হয় অন্যভাবে। মানুষ অন্যের সমস্যা দেখলে মজা পায়। এখন আমি অনেক বদলে গিয়েছি।
জীবনের বহু ঘটনা তাকে ভিতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল জানিয়ে তিনি সবশেষ বলেন, যদি মানুষ সত্যি না জেনে সমালোচনা শুরু করে দেয় তা হলে কেমন লাগে! এমনও হয়েছে কোনও ঘটনার সঙ্গে আমি সত্যিই জড়িত নই। সেটার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছে আমাকে। অচেনা মানুষের দল আমার ছবির নিচে বাজে মন্তব্য লিখে দিয়ে যাচ্ছে! আমরা প্রকাশ্যে বলি, এগুলো কিছুই প্রভাব ফেলে না। কিন্তু আমিও তো রক্তমাংসের মানুষ। কষ্ট হয়। জানেন, আমি খুব আবেগপ্রবণ। একা বসে কত যে কেঁদেছি... সেখান থেকে আবার নিজেকেই বেরিয়ে আসতে হয়েছে। সব পেরিয়ে এখন আমি নতুন মানুষ। কাজ, সংসার আমার জগৎ।
এসএন