দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। বৈঠকটি কোরীয় উপদ্বীপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে বাণিজ্য, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে টোকিওতে একদিনের বৈঠক শেষে রোববার (২৪ আগস্ট) ওয়াশিংটনে পৌঁছান প্রেসিডেন্ট লি। আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত হবে তার ও ট্রাম্পের শীর্ষ বৈঠক।
দুই দেশের এ বৈঠকটি জুলাই মাসের বাণিজ্য চুক্তির পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামাতে সম্মত হয়েছিল। বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি কিনতে ও মার্কিন অর্থনীতিতে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে।
এর পাশাপাশি স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স, এসকে গ্রুপ, হুন্দাই মোটর ও এলজি গ্রুপসহ দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ চারটি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯১ বিলিয়ন ডলারের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ করছে। প্রেসিডেন্ট লির সফরে তাদের প্রধানরাও অংশ নিচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় লিকে সরাসরি ও দৃঢ়ভাবে নিজের অবস্থান জানাতে হবে। কারণ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক অতীতের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
বৈঠকের আরেকটি বড় বিষয় হবে প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা। উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকি, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তাইওয়ান ইস্যুতে সিউলের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নতুন প্রতিরক্ষা নীতি অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন থাকা ২৮ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনার সংখ্যা কমানো হবে না। তবে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে আঞ্চলিক নিরাপত্তায় আরও বড় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকে আরও বেশি অর্থায়ন করতে বলবেন ট্রাম্প। বর্তমানে সিউল বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ বহন করছে এবং সর্ববৃহৎ মার্কিন ঘাঁটি ‘ক্যাম্প হামফ্রিস’-এর পুরো নির্মাণ ব্যয়ও দক্ষিণ কোরিয়াই বহন করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীকে চীনের সমকক্ষ করতে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়াকে অংশীদার হিসেবে দেখতে চান। এজন্যই লি হোয়াইট হাউসে বৈঠক শেষে ফিলাডেলফিয়ার ‘ফিলি শিপইয়ার্ড’ পরিদর্শনে যাবেন, যা গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার হানহা গ্রুপ কিনে নেয়।
তাছাড়া ব্যাটারি উৎপাদন ও সেমিকন্ডাক্টর খাতেও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠকটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং সিউলের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নয়, বরং ভিন্ন ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে আলোচনা হতে পারে।
কিছু বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প হয়তো লিকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কূটনীতি চালাতে পারেন, যা দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এর আগে তার প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের সঙ্গে তিনবার বৈঠক করেছিলেন।
ইএ/টিকে