বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ খুনির ফাঁসি কার্যকর হলো।

শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন জেলার মাহবুবুল ইসলাম। কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার স্থাপনের পর এটিই প্রথম ফাঁসি।

কারা সূত্র জানায়, দণ্ড কার্যকরের সময় তাকে কয়েক মিনিট ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে সিভিল সার্জন তার হাত-পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এর আগে রাত ১১টার দিকে তাকে তওবা পড়ান কারাগারে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম। পরে জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে একটি দল কনডেম সেলে প্রবেশ করে মাজেদের হাত বেঁধে যম টুপি পরিয়ে দেন।

দণ্ড কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা, এডিশনাল আইজি (প্রিজন) কর্নেল আবরার হোসেন, ডিআইজি (প্রিজন) তৌহিদুল ইসলাম, সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী, জেলার মো. মাহবুবুল ইসলাম, ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সরদার, সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসাইন মো. মাইনুল আহসান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট আবদুল আওয়াল, কারা সহকারী সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান শুভ, ডা. খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঢাকা জেলা দক্ষিণ) রামানন্দ সরকার, কারা ইমাম মুফতি ফয়জুল্লাহ প্রমুখ।

কারা সূত্র আরও জানায়, আব্দুল মাজেদের লাশ নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী ডা. সালেহা বেগম, চাচা শ্বশুর আলী আক্কাস, শ্যালক শহিদুজ্জামান সরকার, ভাতিজা আবদুস সালাম, ভাতিজির স্ত্রী সোনিয়া। তার লাশ ভোলায় তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।

প্রায় দু’দশক ধরে পলাতক মাজেদকে সোমবার মধ্যরাতে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। পরদিন মঙ্গলবার তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

পরদিন বুধবার মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চায় মাজেদ। বুধবার রাতে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পরিবারের ৫ সদস্য সাক্ষাৎ করেন।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আব্দুল মাজেদসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ১১ খুনির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি এখনো পালিয়ে আছেন। এদের মধ্যে এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় ও এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। অন্য তিনজন খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল হলে ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পাঁচ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা Nov 22, 2024
img
ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮ Nov 22, 2024
img
পার্থে ৭২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভাঙলো ভারত-অস্ট্রেলিয়া Nov 22, 2024
img
অবশেষে আদানির সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের চুক্তি বাতিল কেনিয়ার Nov 22, 2024
img
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি:গুঞ্জন পিসিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন জয় শাহ Nov 22, 2024
img
জুরাইনে পুলিশ-অটোরিকশা চালক সংঘর্ষ, রেললাইন অবরোধ Nov 22, 2024
img
কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই: জামায়াত আমির Nov 22, 2024
img
ইকুয়েডরকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করল আর্জেন্টিনা Nov 22, 2024
img
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জন নিষিদ্ধ Nov 22, 2024
img
ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: উপদেষ্টা আদিলুর Nov 22, 2024