থমাস এডিসন: নিউজ বয় থেকে বিখ্যাত বিজ্ঞানী

থমাস আলভা এডিসন, একজন সফল মার্কিন উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী ও সফল ব্যবসায়ী। বৈদ্যুতিক বাল্ব, বৈদ্যুতিক পাওয়ার জেনারেশন, সাউন্ড রেকর্ডিং, ফনোগ্রাফসহ অসংখ্য আবিষ্কারের উদ্ভাবক এডিসন। উদ্ভাবনী দক্ষতার অধিকারী এই বিজ্ঞানীর কাছে প্রায় এক হাজারেরও বেশি প্রোডাক্টের মালিকানা স্বত্ত্ব রয়েছে। তাই তাকে আমেরিকার সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্ভাবকের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

থমাস এডিসন ১৮৪৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার অহিও রাজ্যের মিলানে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। নিজ গৃহে মায়ের কাছেই তার পড়ালেখার হাতেখড়ি। ১৩ বছর বয়সে তিনি নিউজবয় এর চাকুরি নেন। তিনি স্থানীয় গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রেলরোডে পত্রিকা ও চকোলেট বিক্রি করতেন। অবসর সময়ে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত বই পড়তেন। একপর্যায়ে তিনি নিজে ‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক হেরাল্ড’ নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন। একসময় তিনি টেলিগ্রাফ পরিচালনা শিখে ফেলেন এবং টেলিগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করেন।

টেলিগ্রাফার হিসেবে তিনি আমেরিকার বিভিন্ন শহর ঘুরে বেরিয়েছেন। ১৮৬৮ সালে তিনি বুস্টন শহরে চলে আসেন এবং টেলিগ্রাফার চকুরী ছেড়ে দিয়ে একজন উদ্ভাবক হওয়ার চেষ্টা করেন। প্রথমে তিনি একটি ‘ভোট রেকর্ডার’ আবিস্কার করেন। কিন্তু এটি বাণিজ্যিকভাবে তেমন সফল হয়নি। তিনিও হাল ছাড়েননি।

১৮৬৯ সালে তিনি নিউইয়র্কে চলে আসেন এবং উদ্ভাবনী কাজ চালিয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি ‘ইউনিভার্সাল স্টক প্রিন্টার’ নামে একটি ডিভাইস আবিষ্কার করেন। এটা থেকে তিনি ৪০ হাজার ডলার আয় করেন, যা দিয়ে তিনি নিউইয়র্কে একটি ল্যাবোরেটরি ও ম্যানুফেকচারিং প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন।

১৮৭৬ সালে তিনি সবকিছু বিক্রি করে নিউইয়র্ক ছেড়ে মেনলো পার্কে চলে আসেন। এখানে তিনি আধুনিক প্রযুক্তির সরঞ্জাম দিয়ে একটি নতুন ল্যাবোরেটরি গড়ে তুলেন। তার এই ল্যাবোরেটরিকে অনেকেই আধুনিক বেল ল্যাবোরেটরির সঙ্গে তুলনা করেন। যেখান থেকে এডিসন এমন কিছু প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন, যা বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে থাকে। এই ল্যাবে তিনি সর্বপ্রথম ‘ফনোগ্রাফ’ আবিষ্কার করেন, যা শব্দ রেকর্ডিং এবং অনুলিপি তৈরি করতে সক্ষম। এর ফলে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করেন।

১৮৭৮ সালে তার এই আবিষ্কার দেখতে তাকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রন জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড। এরপর এডিসন গৃহস্থলিতে ব্যবহার উপযোগী বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেন। ১৮৮২ সালে তিনি ইলেকট্রিক পাওয়ার স্টেশন আবিষ্কার করেন, যা দিয়ে ঘর-বাড়িতে আলো ও বিদ্যুৎশক্তি সরবরাহ করা যায়। সেই থেকে বিশ্বের আনাচে কানাচে বিদ্যুৎ শক্তি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আর থমাস এডিসনের উদ্ভাবনী খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।

ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু ইলেক্ট্রিক কোম্পানি গড়ে তুলেন। ১৮৮৯ সালে তিনি সবগুলোকে একত্র করে ‘এডিসন জেনারেল ইলেকট্রিক’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯২ সালে এটি থম্পসন-হোস্টন কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হয় এবং এর নাম হয়ে যায় ‘জেনারেল ইলেকট্রিক’।

ফনোগ্রাফ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এডিসন মোশন পিকচার নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৮৯১ সালে তিনি তার আবিষ্কৃত মোশন পিকচার প্রদর্শন করেন। এর দু’বছর পরই তিনি বাণিজ্যিকভাবে মুভি তৈরির কাজ শুরু করে দেন। তার এই উদ্ভাবনের উপর ভিত্তি করে পরে অন্যান্য উদ্ভাবকেরা আধুনিক মোশন পিকচার ডিভাইস তৈরি করতে সক্ষম হন। ফলে ১৯১৮ সালের দিকে মুভি ব্যবসা একটি পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক শিল্প হিসেবে বিকাশ লাভ করে।

১৯১১ সালে তিনি তার প্রতিষ্ঠিত সব কোম্পানিকে একীভূত করে ‘থমাস এ. এডিসন ইনকর্পোরেটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আমেরিকার সেনাবাহিনীর দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বিখ্যাত সব মার্কিন বিজ্ঞানীদের নিয়ে ‘নেভাল কনসালটিং বোর্ড’ গঠন করা হয়। থমাস এদিসন এ বোর্ডের প্রধাননিযুক্ত হন।

থমাস এডিসনের আবিষ্কারসমূহ আমেরিকাকে বিশ্বে নতুন করে পরিচিত করে তুলেছে। বিশ্বের শিল্প খাতে এনেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তাই তার উদ্ভাবনের স্বীকৃতি দিয়ে ১৯২৮ সালে মার্কিন সরকার তাকে ‘মেডেল অফ অনার’ প্রদান করে। ১৯২৯ সালে তার উদ্ভাবনীর সুবর্ণ জয়ন্তি পালিত হয়। যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভারসহ বিখ্যাত সব বিজ্ঞানীরা উপস্থিত হয়ে তাকে সম্মান জানিয়েছিলেন।

অবশেষে ১৯৩১ সালের ১৮ অক্টোবর আধুনিক ইলেকট্রিক বিশ্বের পথপ্রদর্শক থমাস এডিসন মারা যান। তার একটি বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে- ‘উদ্ভাবক হতে তোমার প্রয়োজন খুব ভালো কল্পনা শক্তি আর একগুচ্ছ পুরানো মূল্যহীন জিনি’।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশ সফরে এলেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জুট Jul 13, 2025
img
মা-ছেলের মতো সম্পর্ক শাহিদ ও সুপ্রিয়ার Jul 13, 2025
img
ভারতে বাংলা ভাষায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি ট্যাগ’ লাগিয়ে আটক! Jul 13, 2025
img
কোর্ট হাজতে আসামির পকেটে মোবাইল, পাঁচ পুলিশ ক্লোজড Jul 13, 2025
img
মেসির দুর্দান্ত কীর্তি, জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল ইন্টার মায়ামি Jul 13, 2025
img
অন্যের সংসার ভাঙার ইঙ্গিত? বিতর্কে সামান্থা Jul 13, 2025
img
রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আবারও কাঁপল ইউক্রেন Jul 13, 2025
img
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহর সান্তিয়াগো, ঢাকার অবস্থান ৯তম Jul 13, 2025
img
এক দশক পর ক্রিকেটে বিরল দৃশ্য, ভারতের ইনিংস থামল ইংল্যান্ডের সমান রানেই Jul 13, 2025
img
সেন্টমার্টিন রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা Jul 13, 2025
img
ভালোবাসা দিবস নয়, দীপাবলিই বেছে নিলেন কার্তিক Jul 13, 2025
img
দুপুরের মধ্যে দেশের ১১ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস Jul 13, 2025
img
মরিচ গুঁড়া ছিটিয়ে ছুরিকাঘাত, হাসপাতালে কন্নড় অভিনেত্রী Jul 13, 2025
img
স্টারকিড নয়, অভিনেত্রী হয়ে উঠতে চান শানায়া কাপুর Jul 13, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত অন্তত ১১০ ফিলিস্তিনি Jul 13, 2025
img
তরুণ প্রজন্ম আর কোনো নির্বাচনী ভাগ-বাটোয়ারায় বিশ্বাস করে না: নাহিদ ইসলাম Jul 13, 2025
img
ঢাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা Jul 13, 2025
img
শঙ্কামুক্ত চাঁদপুরের সেই খতিব, আসামির জবানবন্দিতে যা জানা গেল Jul 13, 2025
img
ক্ষমতায় গেলে বিএনপি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে: এনসিপি Jul 13, 2025
img
সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের দাবি মহিলা পরিষদের Jul 13, 2025