২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। এর ৬৩ দিন পর তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন ভারতের শিলংয়ে। সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে যে পথে সালাহউদ্দিন আহমদকে ভারতে পাচার করা হয়েছিল, গতকাল শনিবার সেখানে আবার তাকে দেখা গেল। এবার তিনি এসেছেন গুমবিষয়ক একটি তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিতে।
সরেজমিন দেখা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল সীমান্তের তামাবিল ইমিগ্রেশন, নলজুরী খাসিয়া হাওরসহ বিভিন্ন জায়গায় হেঁটে, দাঁড়িয়ে, হাত নাড়িয়ে কোন পথে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়, সেসব স্থান দেখান এবং বিভিন্ন ভঙ্গিতে স্মৃতিচারণ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। ১০ বছর আগে ২০১৫ সালের ১০ মে সন্ধ্যায় তাকে এই পথে ভারতের শিলং নেওয়া হয় বলে বর্ণনা করছিলেন সালাহউদ্দিন।
গুম হওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি জানতাম আমাকে কোথাও নিয়ে ক্রসফায়ার দেওয়া হবে বা মেরে ফেলে দেওয়া হবে। সেই রকম অনুভূতিতেই ছিলাম। আমাকে সম্ভবত এই রাস্তা দিয়ে (তামাবিল সীমান্ত) বর্ডার ক্রস করে ভারতের শিলংয়ে চোখ বাঁধা, হাত বাঁধা অবস্থায় নিয়ে গেল। শিলংয়ের জয়পুরে যাওয়ার একটু আগে চোখের বাঁধ খুলে দিল। আমাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন আমি মনে করলাম যে আমাকে হয়তো ছেড়ে দিচ্ছে। পরে যেখানে ছেড়ে দিল, তখন পুলিশকে বলার জন্য পথচারীদের বললাম। পুলিশ যখন আমাকে ধরে মনে হচ্ছিল আমি সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছি। পুলিশ আমাকে মেন্টাল হসপিটালে নিয়ে গেল। আমি ভাবলাম এখন পাগলদের কাছেই আমাকে রেখে যাচ্ছে। যাই হোক আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে আছি।’
২০১৫ সালের ১০ মার্চ গুম হওয়ার ৬৩ দিন পর সালাহউদ্দিন আহমদকে ভারতের শিলংয়ে পাওয়া যায়। শিলংয়ে আইনি জটিলতা ও মামলা মোকাবিলা করার কারণে তিনি প্রায় ৯ বছর সেখানে অবস্থান করেন। ৯ বছর পর দেশে ফেরার পথ সুগম হয় গত বছরের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর। ওই বছরের ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।
এদিকে সালাহউদ্দিন আহমদকে সিলেটে স্বাগত জানান বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। পরে তিনি হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। এর আগে সকালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সালাহউদ্দিন আহমদকে স্বাগত জানাতে ভিড় জমান বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনার তদন্ত করতে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। দেশে ফেরার ১০ মাস পর গত ৩ জুন সালাহউদ্দিন আহমদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এদিকে রাতে ঢাকায় ফেরার পথে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে দেশের একটি গণমাধ্যমকে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগামীতে জনগণ যদি আমাদের দায়িত্ব দেন তবে সিলেটের সার্বিক উন্নয়নে সর্বাধিক প্রচেষ্টা রাখব।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমরা এখনো মনোনয়ন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। সময়মতো সবাই জানতে পারবেন।’
এসএস/টিকে