তোকমার জাদুকরী উপকার

আমাদের দেশে তোকমা খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি বীজ দানা। আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও চীনা মেডিসিনে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, প্রোটিন, আয়রন ও ক্যালরি।

তোকমার বৈজ্ঞানিক নাম Hyptis suaveolens, একে স্থানীয়ভাবে বিলাতি তুলসি নামেও ডাকা হয়। ভেষজ গুণাবলি পেতে এই বীজ দিয়ে শরবত তৈরিসহ নানা উপায়ে খাওয়া হয়। এছাড়া রূপচর্চাতেও গুঁড়ো করে ব্যবহার করা হয়।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য তোকমায় রয়েছে ২৩৩ কিলোক্যালোরি, ২৩ গ্রাম প্রোটিন ও ৪৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।

যেভাবে খাবেন তোকমার বীজ-

  • ১ টেবিল চামচ পরিমাণ তোকমার বীজ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • ছোট ছোট কালো দানার বীজগুলো সারারাত ভিজে ফুলে উঠবে।
  • সকালে এই পানি ফুলে ওঠা তোকমা বীজসহ পান করে নিন খালি পেটে। সঙ্গে ১ চা চামচ খাঁটি মধু যোগ করতে পারেন।

চলুন জেনে নিই, নিয়মিত তোকমা সেবনের জাদুকরী কিছু উপকার-

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকর তোকমা। সামান্য তোকমা অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর তা দুধে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।

ওজন কমাতে
অনেকেই শরীরের ওজন কমাতে চায়। সেজন্য তোকমা অনেক সহায়ক খাদ্য হিসেবে উপকার করে থাকে। এতে কেবল আঁশই থাকে না। তোকমা শরীরে অনেক শক্তিও সরবরাহ করে। যদি তোকমা দানা বাদাম ও শুকনো ফলের সঙ্গে মিশ্রণ করে একমুঠো পরিমাণ খাওয়া যায়, তাহলে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধামুক্ত থাকা যায়। এ জন্য খুব সহজেই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

দেহের তাপ কমায়
তোকমা গরমকালে দেহের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। আর এ কারণে গরম আবহাওয়ার দেশগুলোতে বহু মানুষ তোকমার শরবত পান করে। এটি সুস্বাদু করার জন্য চিনি, মধু, এমনকি কোথাও কোথাও নারিকেল দুধ দেয়া হয়।

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তোকমা। মূলত দেহের বিপাকক্রিয়া ধীর করে দেয় তোকমা। ফলে কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে রূপান্তরের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে, তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন।

এসিডিটি দূর করে
তোকমা এসিডিটি দূর করতেও কার্যকর। এটি পেটের এসিড নিয়ন্ত্রণ করে জ্বালাপোড়া দূর করে। এজন্য পানিতে সামান্য তোকমা বীজ ভিজিয়ে রেখে পান করতে হবে। তোকমার বীজ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, যা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক।

সুস্থ ত্বক ও চুল
ত্বকের নানা সমস্যায় তোকমা ব্যবহার করা যায়। এজন্য কিছু তোকমা বীজ গুঁড়ো করে তা নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগাতে হয়। এটি নানা চর্মরোগ নিরাময়ে কাজ করে। এটি একজিমা ও সোরিয়াসিস নিরাময়ে কার্যকর। সুস্থ চুলের জন্য এটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।

ঠাণ্ডার সমস্যায়
তোকমা বীজে রয়েছে ঠাণ্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি আপনার দেহকে ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করবে। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে চাইলে তাই নিয়মিত তোকমা খাওয়া যেতে পারে।

সতর্কতা: গর্ভবতী নারীদের দেহের ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে তোকমা। তাই গর্ভবতী নারী ও শিশুদের তোকমা খাওয়া উচিত নয়। ভালোভাবে পানিতে গুলিয়ে না খেলে এটি পেটে ফুলে যেতে পারে। এতে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, এমনকি শিশুদের শ্বাসরোধও হতে পারে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সালমান খানের জন্মদিনে সেজে উঠল বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্ক Dec 27, 2025
img
দুঃসংবাদ পেল রিশাদের দল Dec 27, 2025
img
ফরিদপুরে কনসার্ট বাতিল, মুখ খুললেন জেমস Dec 27, 2025
img
হট্টগোলে স্থগিত কৈলাস খেরের সংগীতানুষ্ঠান Dec 27, 2025
img
ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শেষে ইসি ছাড়লেন তারেক রহমান Dec 27, 2025
img
নেত্রকোনায় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত Dec 27, 2025
img
ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ আর নেই Dec 27, 2025
নবীজি অন্যদের সাথে যেমন আচরণ করতেন Dec 27, 2025
img
১৪ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেল ইংল্যান্ড Dec 27, 2025
img
মাঠে হার্ট অ্যাটাক করেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ Dec 27, 2025
img
২ দিন বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু Dec 27, 2025
img
ম্যাচ হেরে কী ব্যাখ্যা ‍দিলেন নোয়াখালীর অধিনায়ক? Dec 27, 2025
img
২ বছর পর বড় পর্দায় ফেরা নিয়ে মুখ খুললেন অপু বিশ্বাস Dec 27, 2025
img
ঘন কুয়াশায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ২২ Dec 27, 2025
img
নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করে ইসি ছাড়লেন জাইমা রহমান Dec 27, 2025
img
ঢাকা-১৭ আসনে ভোটার হচ্ছেন তারেক রহমান Dec 27, 2025
img
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে দুদকের অভিযান Dec 27, 2025
img
ফের শাহবাগ মোড়ে ইনকিলাব মঞ্চের অবস্থান Dec 27, 2025
img
নতুন বছরে চমক আসছে নেটফ্লিক্সে Dec 27, 2025
img
জাহ্নবীকে ‘নকল সুন্দরী’ বলে সমালোচনা করলেন ধ্রুব রাঠি Dec 27, 2025