বলিউডের তারকা সন্তানদের মধ্যে অন্যতম শাহিদ কাপুর। তবে তার বেড়ে ওঠা ছিল একটু ভিন্ন। কারণ, মাত্র তিন বছর বয়সে মা-বাবার বিচ্ছেদ হওয়ায় সম্পূর্ণ নিজের পরিচয়েই তাকে বড় হতে হয়েছে। এমনকি ইন্ডাস্ট্রির বেশিরভাগ মানুষ জানতেন না শাহিদ প্রখ্যাত অভিনেতা পঙ্কজ কাপুরের ছেলে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনের ভারসাম্য ও বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
তারকা সন্তানের পরিচয়ে সুবিধা পাওয়া বিষয়টি তুলে শাহিদ কাপুর বলেন, ‘অনেকে ভাবেন আমি পঙ্কজ কাপুরের ছেলে বলেই অভিনেতা হয়েছি।
কিন্তু আমার তিন বছর বয়সেই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। খুব ছোট ছিলাম, তাই তেমন কিছু মনে নেই। সত্যি কথা বলতে বাবার সঙ্গে খুব কম সময় কাটিয়েছি, মানুষ জানতই না আমি তাঁর ছেলে। কখনো বাবার নাম ব্যবহার করিনি। মায়ের সঙ্গে বড় হয়েছি। সবকিছুই নিজের চেষ্টায় হয়েছে। আমি বাবার কাছে কখনো সাহায্য চাইনি, তিনিও কখনো কারও সঙ্গে কথা বলে আমাকে কাজ পাইয়ে দেননি।’
অভিনেতা পঙ্কজ কাপুর এবং নীলিমা আজিমের সন্তান হলেও কখনো ভাবেননি তিনি নিজেও অভিনয়ে আসবেন। অভিনয়ে আসার বিষয়টি দুর্ঘটনা হিসেবে দেখেন শাহিদ। তিনি বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারটা আসলে দুর্ঘটনার মতো। নাচ হোক বা অভিনয়, কিছুই পরিকল্পনা করে হয়নি।’
প্রথম কাজ পাওয়ার স্মৃতি উল্লেখ করে শাহিদ বলেন, ‘ছোটবেলায় নাচের প্রতি আগ্রহ ছিল, তাই ক্লাস করতাম। আমার শিক্ষক আমার নাচ পছন্দ করতেন, সেখান থেকেই আয় শুরু হলো। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। এক বন্ধুর সঙ্গে অডিশনে গেলে বিজ্ঞাপন নির্মাতারা আমাকে দেখে অডিশন নিতে বলেন। আমি বড় একটি বিজ্ঞাপন পেয়ে যাই, যেখানে শাহরুখ খান আর রানি মুখার্জি ছিলেন। ওই বিজ্ঞাপনই আমার পথ খুলে দেয়।
কাজ আসতে শুরু করে। কিছুই পরিকল্পিত ছিল না।’
ব্যক্তিগত–পেশাদার জীবনের ভারসাম্য নিয়ে শাহিদ বলেন, ‘২২ বছর হয়ে গেছে কাজ করছি। এখন চেষ্টা করি যেন কাজের বিষয়গুলো ঘরে না আনি। বাড়িতে ফিরলেই আমি বাবা, স্বামী, ছেলে-এই ভূমিকাগুলোই পালন করি। পেশাদার জীবন বা তারকাখ্যাতি কখনোই ব্যক্তিগত জায়গায় আনা উচিত নয়।’
তিনি বলেন, ‘যখন আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে থাকি, সেই সময়টাকে খুব উপভোগ করি। ক্লান্ত লাগলেও সেটা গুরুত্ব দিই না-ওরা আমার সন্তান, বুঝে নেবে। ভবিষ্যতে বড় হলে ওরাও এসব বুঝতে পারবে।’
স্ত্রী মীরার প্রসঙ্গে শাহিদ জানান, ‘মীরা খুবই সহায়ক। আমাকে খুব ভালোভাবে বোঝে। আমাদের একটা নিয়ম আছে-বাড়িতে থাকলে কাজের কথা বলা যাবে না। খুবই কম সময় আমরা সিনেমা বা কাজের আলোচনা করি।’
সন্তান লালনপালনের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির কথাও জানান শাহিদ। তার কথায়, ‘আমি বিশ্বাস করি, সন্তানদের ওপর বাবা-মায়ের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। বাবা হিসেবে আমি আমার সন্তানদের ভালো গুণগুলোকে লালন করতে চেষ্টা করি এবং তাদের নিজেদের লক্ষ্য খুঁজে নিতে উৎসাহ দিই। আমি সবসময় চেষ্টা করি যেন আমার তারকা-পরিচয় তাদের ওপর কোনো ছাপ না ফেলে। ‘কারো ছেলে’ হয়ে বড় হওয়া উচিত নয় নিজের পরিচয় থাকা প্রয়োজন।’
সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এমকে/এসএন