ফায়ার বল: অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপক প্রযুক্তি

বিশ্বে মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনাগুলোর অন্যতম একটি অগ্নিকাণ্ড। বিশ্ব যত বেশি আধুনিক হয়েছে, এই দুর্ঘটনার প্রকৃতি ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব তত বেড়েছে। আর সেই সঙ্গে আবিষ্কৃত হয়েছে আগুন নিয়ন্ত্রণের নানা প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির অন্যতম একটি নতুন সংযোজন ‘ফায়ার বল’।

ফায়ার বল হচ্ছে আগুন নেভানোর জন্য ব্যবহৃত একটি অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপক বল। কোথাও বড় ধরনের আগুন লাগলে সেখানে এই বল ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

অগ্নিনির্বাপক বল ওজনে হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য। ফলে এর ব্যবহার খুবই সহজ। এটা খুব দ্রুত আগুন নিভাতে সক্ষম। এটি পানি-নিরোধক প্লাস্টিকের খোসা দ্বারা তৈরি একটি বল যার ভেতর, “নন-টক্সিক মনো-অ্যামোনিয়াম ফসফেট” নামে এক ধরনের রাসায়নিক পাউডার দ্বারা পরিপূর্ণ। এই পাউডার পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না।

এই বলে কোনো প্রকার সুইচ নেই। কারণ এটি একটি স্বয়ংক্রিয় বল। তাই এটি ব্যবহারে কোনো বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন নেই। সাধারণত এর ওজন ১.৩ কেজি হয়ে থাকে। তাই নারী, শিশু, বৃদ্ধ যেকোনো ব্যক্তি এটি ব্যবহার করতে পারেন।

এটি ব্যবহারের নিয়ম হচ্ছে- যখন কোথাও আগুন লাগে, তখন এই বলটিকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করতে হয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এই বলটি বিস্ফোরিত হয় এবং এর ভেতরে থাকা পাউডার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিশেষ রাসায়নিক পাউডার কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন নিভিয়ে দিতে ভূমিকা রাখে।

কেবল আগুন লাগার পর ব্যবহার করতে হবে তা নয়। আগুন লাগার পূর্বেও অগ্নিপ্রতিরোধক হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়। উদাহরণস্বরূপ:- বাসা-বাড়িতে, কল-কারখানায়, শিল্প-প্রতিষ্ঠানে, গাড়িতে সব জায়গাতেই এটি ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ যেখানেই অগ্নিকাণ্ড ঘটার সম্ভাবনা আছে, সেখানেই এই বল ব্যবহার করা যাবে।

আমরা সাধারণত দেখি যে, আমাদের বাসা-বাড়ি, কল-কারখানা, শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার স্থাপন করা হয়। কিন্তু এই যন্ত্রটি সবাই ব্যবহার করতে জানে না। আবার এটি ওজনে ভারী হওয়ায় সবাই এটি ব্যবহার করতে পারে না। তাছাড়া এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেও কাজ করতে পারে না। তাই অনেক সময় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও এটি আগুন নিয়ন্ত্রণে খুব একটা কাজে আসে না।

অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপক বলের খোসা প্লাস্টিকের তৈরি হওয়ায়, আগুনের সংস্পর্শে আসার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এটি বিস্ফোরিত হয়। তাই যেকোনো স্থানে এটি রাখা যাবে। যখন আগুন বলকে স্পর্শ করবে কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিস্ফোরিত হবে। ফলে এর ভেতরে থাকা অগ্নিনির্বাপক পাউডার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন নিভাতে ভূমিকা রাখবে।

তাছাড়া এর সবচেয়ে বড় সুবিধা, এটি সুবিধাজনক যেকোনো দূরত্ব থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে। এটি ব্যবহারের জন্য আগুনের কাছাকাছি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের জন্য যেকোনো দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অগ্নিনির্বাপক বল ব্যবহার করা সহজ।

এই বলের আরেকটি বড় সুবিধা হল এটাকে নাড়া-চাড়া করলে বা এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও এটি নিজে থেকে কোনো আগুন তৈরি করে না। তাছাড়া এটি পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে তৈরি হয় বলে এটা মানুষ বা পরিবেশের তেমন কোনো ক্ষতি করে না।

অগ্নিকাণ্ডের তীব্রতা ও ব্যাপকতা অনুযায়ী যেকোনো সংখ্যক বল ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে যেকোনো বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রেও এই বল ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেসব দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় পানি সরবরাহ করা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ, সেখানে এই বল ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।

তবে এই বলের একটাই অসুবিধা এটা বিস্ফোরিত হবার সময় উচ্চ মাত্রায় শব্দ তৈরি হয়।

সুতরাং বলা যায়, যেকোনো ধরনের অগ্নিকাণ্ড সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি প্রযুক্তি ‘অগ্নিনির্বাপক বল’। তাই ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বাসা-বাড়ি এবং যেকোনো প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে অগ্নিনির্বাপক বল ব্যবহার করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: