ইন্টারকন্টিনেন্টাল-শাহবাগ-চাঁনখারপুল অবরোধ, অচল রাজধানীর ৬ সড়ক

২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফা দাবিতে 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন' প্ল্যাটফর্ম ঘোষিত সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মহাসড়কে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ-চাঁনখারপুল মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ৭ম দিনে রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৪টায় এই অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বিভিন্ন বিভাগ ও হল থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও ফেস্টুনসহ আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ, চাঁনখারপুল মোড় অবরোধ করেন। ফলে ফার্মগেট-শাহবাগ, গুলিস্তান-নিউ মার্কেট, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ -সাইন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে অ্যাম্বুলেন্সের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা জায়গা করে দেয়।

এসময় শিক্ষার্থীরা, একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’'- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এর আগে, গতকাল শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শেষে সারা দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মহাসড়ক অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেন। যাকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এবার শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবিগুলো হলো:

১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।

২. পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ছাড়া)।

৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া।

৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও কোটা প্রতিহত করা হবে

২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।

পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু গত ৯ জুন প্রাথমিক শুনানির পর আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বড় তারকারা ব্যর্থ, অথচ 'ছাভা' বাজিমাত! ওয়ার ২ কি পারবে ১ কোটির টিকিট বিক্রি পেরোতে? Jul 10, 2025
img
মৌলভীবাজারে সেপটিক ট্যাংকে পড়ে প্রাণ গেল ৪ জনের Jul 10, 2025
img
ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাচ্ছে নিশো-চঞ্চল-এর ‘দম’ Jul 10, 2025
img
জেনে নিন দেশের বাজারে আজকের স্বর্ণ ও রুপার দাম Jul 10, 2025
img
জুলাই সনদ কোনো কবিতা না, আমাদের বাঁচার সনদ : হাসনাত আব্দুল্লাহ Jul 10, 2025
img
মেসির জোড়া গোলে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ জিতল মায়ামি Jul 10, 2025
img
জাতিসংঘের বিশেষ দূতের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা Jul 10, 2025
img
বাংলাদেশে বিনিয়োগে অনেক চ্যালেঞ্জ : চীনা রাষ্ট্রদূত Jul 10, 2025
img
ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের Jul 10, 2025
img
১০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি হামাস Jul 10, 2025
img
তারেক রহমান এখন আরো পরিপক্ব ও যোগ্য নেতা: মান্না Jul 10, 2025
img
স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, চিকিৎসকের ওপর ক্ষেপে গেলেন কাঞ্চন Jul 10, 2025
img
ইন্টারনেট ছাড়াই চলবে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী বিটচ্যাট Jul 10, 2025
img
এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ দুপুর ২ টায় Jul 10, 2025
img
গাজায় একদিনে প্রাণ গেল আরও ৭৪ ফিলিস্তিনির Jul 10, 2025
img
শাহরুখকে ছাড়াই হারিয়ে গেল রাকেশ শর্মার বায়োপিক ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’! Jul 10, 2025
img
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়ালকে ৪-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পিএসজি Jul 10, 2025
img
দুপুরের মধ্যে দেশের ৭ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের আভাস Jul 10, 2025
img
চট্টগ্রামে চুরি হওয়া স্বর্ণালংকারসহ ১ জন গ্রেফতার Jul 10, 2025
img
নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হবে : আমিনুল হক Jul 10, 2025