যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তবে মহান আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাকে বিশেষ প্রতিদান দেন। এই প্রতিদান রোজাদারের আমল থেকে নয়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ দান। এতে রোজাদারের সওয়াব কোনোভাবেই কমে না, বরং এটি মহান আল্লাহর দয়া ও করুণার বহিঃপ্রকাশ।
রমজানে রোজাদারকে ইফতার করানো হলো, মুমিনের বিশেষ আমল। এ বিশেষ আমলের বিনিময়ে মহান আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। এ ছাড়াও রয়েছে অনেক ফজিলত। অন্য রোজাদারকে ইফতার করানো নেকি বৃদ্ধির আমল ও পাপ মোচনের আমল হিসেবে ঘোষণা করেছেন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে, হজরত যায়েদ ইবনে জুহানি রা. বর্ণনা করেছেন, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করালো, তারও রোজাদারের ন্যায় সওয়াব হবে; তবে রোজাদারের সওয়াব বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। (তিরমিজি ৮০৭)
আরেক বর্ণনায় এসেছে, যে রোজাদারকে ইফতার করালো, তাকে পানাহার করালো, তাকেও রোজাদারের সমান সওয়াব দেয়া হবে; তবে রোজাদারের নেকি বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। (তাবরানি, মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক)
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।’ সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘ হে আল্লাহর রসুল! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।’ রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘পানিমিশ্রিত এক পেয়ালা দুধ বা একটি খেজুর অথবা এক ঢোঁক পানি দ্বারাও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, মহান আল্লাহ তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)।
ইফতারের জন্য কেউ কাউকে দাওয়াত করলে করণীয় কী এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি দাওয়াত গ্রহণের বর্ণনা পাওয়া যায়, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাকে এক নারী ইফতারের জন্য দাওয়াত করল, তিনি তাতে সাড়া দিলেন। বললেন, আমি তোমাকে বলছি, যে গৃহবাসী কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তাদের জন্য তার অনুরূপ সওয়াব হবে। নারী বলল, ‘আমি চাই আপনি ইফতারের জন্য আমার কাছে কিছুক্ষণ অবস্থান করুন, বা এ জাতীয় কিছু বলেছে। তিনি বললেন, ‘আমি চাই এ নেকি আমার পরিবার অর্জন করুক। (মুসান্নেফে ইবনে আব্দুর রাজ্জাক)
আবু সাওয়ার আল-আদাওয়ি রহ. বলেন, বনি আদি গোত্রের লোকেরা কেউ কখনো একাকী ইফতার করেনি। যদি তার সঙ্গে ইফতার করার জন্য কাউকে সঙ্গী পেত; তাহলে তাকে নিয়ে ইফতার করত। আর যদি কাউকে না পেত, তাহলে নিজের খাবার মসজিদে নিয়ে এসে মানুষের সঙ্গে খেত এবং মানুষকেও খেতে দিত।
খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে আরও অনেকগুলো ইবাদত পালিত হয়। নিমন্ত্রিত ভাইদের সঙ্গে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা তৈরি হয়। যে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের কারণ। যেমনটি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। (মুসলিম, হাদিস: ৫৪)
রমজান মাস সহমর্মিতা ও সমবেদনার মাস। তাই ব্যয়বহুল বাহারি ইফতারের আয়োজন না করে পাড়া–প্রতিবেশী, গরিব মিসকিন, দরিদ্র অসহায়দের ইফতারের বিষয়ে যত্নবান ও সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। পথশিশু, ছিন্নমূল ও পথিকদের ইফতারের ব্যবস্থা করাও কর্তব্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইফতার মাহফিল ও ইফতার পার্টির আয়োজন না করে, গরিব অসহায়দের দান–খয়রাত করা সমীচীন। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
যে ব্যক্তি তৃপ্তিসহ পেট পুরে পানাহার করল, তার প্রতিবেশী অভুক্ত অবস্থায় রাত যাপন করল, সে মুমিন নয়। (মুসলিম)।
মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ হলো- রোজাদারকে ইফতার করানোর ঘোষণা ও কল্যাণের আহ্বান। তিনি বান্দার জন্য কল্যাণে ভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। যেমন তিনি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করার আহ্বান জানিয়ে সওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন।
আরএইচ