নিয়মিত দই খেলে শরীরে যা হবে

পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে দই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে, তবে এটি মিষ্টিহীন হওয়া উচিত। দইকে বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে, যেমন দই-চিড়া, লাচ্ছি অথবা সালাদের ড্রেসিং হিসেবে।

মার্কিন পুষ্টিবিদ ব্রুক গ্লেজার "ইটদিস ডটকম" এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নিয়মিত দই খাওয়ার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এছাড়া, এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যে ধরনের দই স্বাস্থ্যকর

বাজারে নানান ধরনের দই পাওয়া যায়।
তবে ব্রুক গ্লেজারের মন্তব্য হল, যে দইতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি আর চিনির পরিমাণ কম সেটাই বেশি স্বাস্থ্যকর।

এক্ষেত্রে টক দই বেছে নিতে হবে। আর নিয়মিত খেলে মিলবে নানান উপকার।

প্রোটিনের উৎস: টক দইতে সাধারণত প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। আর প্রোটিন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

তাই দইয়ের সাথে নানান ধরনের ফল মিশিয়ে খেতে পারলে প্রোটিনের চাহিদা মেটার পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও মিলবে।

রক্তচাপ স্বাস্থ্যকর পর্যায় রাখা: ‘জার্নাল অফ হাইপারটেনশন’য়ে প্রকাশিত ‘বস্টন ইউনিভার্সিটি’ পরিচালিত ২০১৮ সালের করা গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, দুগ্ধজাতীয় খাবার বিশেষ করে টক দই নিয়মিত গ্রহণ করার সাথে রক্তচাপ কম থাকার সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে পারে: রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর মাধ্যমে টক দই হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
‘জার্নাল অফ ডেইরি সায়েন্স’য়ে ইরানের তাবরিজ ইউনিভার্সিটি’ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিভাগের করা গবেষণায় দাবি করা হয়, দইতে থাকা প্রোবায়োটিক এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল-সহ সার্বিকভাবে সারা শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সক্ষম।

ক্যালসিয়াম গ্রহণ বাড়ে: প্রোটিন ছাড়াও টক দই থেকে মিলবে ক্যালসিয়াম। যা পেশি, স্নায়ু, ধমনী ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে।
হজমে সহায়তা: ভালো ব্যাক্টেরিয়া হজমের জন্য উপকারী। আর এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়া যে দই থেকে পাওয়া যায়, সেটা প্রায় সবারই জানা।
পেনসালভিনিয়া ভিত্তিক পুষ্টিবিদ লিন্ডসে কেইন মন্তব্য কেরেন- বৃহদান্ত্রে থাকা নানান ধরনের ব্যাক্টেরিয়া, ইস্ট, ভাইরাস- এসব অনুজীবদের মিলিতভাবে বলা হয় ‘গাট মাইক্রোবায়োম’।

এই মাক্রোবায়োমের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে দই। ফলে পেটব্যথা, পেটফোলা, বদহজম, গ্যাস হওয়া- ইত্যাদির হওয়ার ঝুঁকি কমে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব: প্রোবায়োটিক শুধু যে পেটের স্বাস্থ্যই নয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সহায়তা করে- জানান গ্লেজার।
তার কথায়, “মাইক্রোবায়োম ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া দেহে ঢুকতে বাধা দেয়। আর এভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব রাখে দই।”
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: প্রোবায়োটিক মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।

পুষ্টিবিদ কেইন বলেন, “অন্ত্রের সাথে মস্তিস্কের স্বাস্থ্যের যোগাযোগ রয়েছে- নানান গবেষণায় এটা এখন প্রমাণিত। আর দই অন্ত্রের অবস্থা ভালো রাখতে পারে যা মস্তিস্কেও প্রভাব পড়ে। ফলে কমে দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ। উন্নত হয় মেজাজ ও স্মরণ শক্তি।”

পেটভরা অনুভূতি দেয়: প্রোটিন দীর্ঘক্ষণ পেটভরা রাখতে সাহায্য করে। আর দইতে প্রোটিন থাকায়, দীর্ঘক্ষণ পেটভরা অনুভূতি দিতে পারে।
ফলে ‘খাই খাই’ভাব কমে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া হয় কম।
কেইন বলেন, “দই খাওয়ার পর তৃপ্তির অনুভূতি পাওয়া যায় বহুক্ষণ।”

নানান ধরনের পুষ্টির উৎস: প্রোবায়োটিক ছাড়াও নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় দই থেকে।

কেইন বলেন, “দই থেকে মিলবে পরিমিত মাত্রায় ফসফরাস (হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে), ম্যাগনেসিয়াম (বিপাক, ঘুম ও মেজাজে প্রভাব রাখে) এবং পটাসিয়াম (রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, পেশির কার্যকারিতা ও সেরে ওঠাতে সাহায্য করে)।

“শুধু তাই নয়, প্রোবায়োটিক ভিটামিন কে উৎপন্ন করে, যা স্বাস্থ্যকর জমাট বা ঘন রক্ত তৈরিতে সহায়তা কর।”

ওজন কমাতে বা রক্ষার্থে সহায়তা: ‘ন্যাচার পোর্টফোলিও’তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে নিয়মিত টক দই খাওয়ার সাথে দেহের চর্বি কমা, কোমরের পরিধি এবং ‘বডি ম্যাস ইন্ডেক্স’ কম থাকার সাথে সম্পর্ক রয়েছে।

এছাড়া ‘জার্নাল অফ দি আমেরিকান কলেজ অফ নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, টক দই ওজন কমানো ও দেহের চর্বি ঝরানোর গতি বাড়াতে সাহায্য করে।

বয়স বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যকর প্রভাব: নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকায় নানান বয়সিদের মাঝে দই উপকারী প্রভাব ফেলে।
যেমন- হাড়ের ও মাংস পেশির উন্নতি করে। ফলে বেশি বয়সে পেশি ও হাড় ক্ষয়ের গতি কমে।

‘জার্নাল অফ দি আমেরিকান কলেজ অফ নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়- ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ফসফরাস-সহ নানান পুষ্টি উপাদান দেহে যেসব উপকারী প্রভাব ফেলে সেগুলো স্বাস্থ্যকরভাবে বয়স বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

দই খাওয়ার একটাই অপকারিতা

বাজারে নানান ধরনের দই পাওয়া যায়। তবে বেশি চিনি দেওয়া দই খেলে মিষ্টি খাওয়া পরিমাণ বাড়বে। তাই এই দিকে নজর দিতে হবে।
কেইন বলেন, “মাঝেমধ্যে অল্প মিষ্টিযুক্ত দই খাওয়া যেতে পারে। তবে নিয়মিত মিষ্টিদই খেলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহতে ভোগার ঝুঁকি বাড়বে।”

তাই নিয়মিত খেতে চাইলে টক দই বেছে নেওয়া হবে উপকারী সিদ্ধান্ত।

Share this news on: