বিএনপি যেকোনো মূল্যে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ- তারেক রহমান

বিএনপি যেকোনো মূল্যে দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, বিএনপি এবং তার প্রতিটি নেতাকর্মী আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, বাংলাদেশে যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। বাংলাদেশে যেকোনো মূল্যে মানুষের ভোটের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বাংলাদেশে যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে ৩১ দফা নিয়ে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় এবং দিনাজপুর জেলা বিএনপির কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় ৩১ দফার নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন বিএনপির প্রশিক্ষণ সেলের নেতারা।

তারেক রহমান বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা যে সংগ্রামে রাজপথে নেমে এসেছিলাম, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। যেই সংগ্রামের জন্য আমাদের বহু নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছে। বহু নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তাদের এই বলিদানকে কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে যুদ্ধ না হলে শিশু হত্যা হয় না। কিন্তু জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আমরা দেখেছি সেই পলাতক স্বৈরাচারের নির্বিচার অত্যাচারের কারণে এই দেশে প্রায় ১০০ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এই শিশুদের কোনো অপরাধ ছিল না। এই শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। এই শিশুদের বলিদান কেন, শুধুমাত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সংস্কার শুরু করেছে শহীদ জিয়ার আমল থেকেই। আমরা যখন সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি তখন স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দিয়েছি। আর এখন যারা দিচ্ছেন, আপনারাই তা বিচার করবেন। আমরা যা দিয়েছি, তা পূরণ করে ছাড়ব। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া।

তিনি বলেন, আমরা শুধু ৩১ দফা দিয়েই থেমে থাকিনি, মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। নেতাকর্মীদের মাধ্যমেই তা পৌঁছে দিতে হবে। দেশের ৭০ ভাগ ভালো কাজ বিএনপি করেছে। সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশের সমস্যা নিয়েই কর্মশালায় বেশি প্রশ্ন পেয়েছি। জনগণ জানে দেশের ভালো কিছু করতে পারলে বিএনপিই করতে পারবে। এই আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে বিএনপিকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, জনমানুষের চাওয়ার সঙ্গে একটি মহলের চাওয়ার পার্থক্য রয়েছে। আমরা চাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হলে সব কিছু বাধাগ্রস্ত হবে। যেকোনো মূল্যে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ভোট যদি আপনার পক্ষে আনতে হয়, তবে জনগণের কাছে যেতে হবে। যে কোনো মূল্যে জনগণের সঙ্গে থাকার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির ওপর জনগণ আস্থা রাখে। তারা মনে করে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব হলে তা বিএনপি পারবে। তাই আমি বলছি, জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। জনগণ ছাড়া আমাদের উপাই নেই। আপনারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। রাজপথে মিছিল, মিটিং, সংগ্রাম করেছেন। এবার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে দেশ গঠনের জন্য।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দলের তরুণ নেতৃত্ব ছিল, তরুণ সহকর্মী ছিলেন, তাদের অনেকেই আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে বয়স পার হয়ে গেছে। এটার ভুক্তভোগী শুধু ছাত্রদল নয়, এর বাইরে অনেক মানুষ আছেন। যারা স্বৈরাচারের রাজনীতি সমর্থন করতেন না। কিন্তু সরকারের পক্ষে না থাকায় তাদেরও চাকরি খেয়েছে বা চাকরি দেয়নি। এ বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানোই হবে লক্ষ্য। নারীদের ফ্রি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে অনুকরণীয় হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বিএনপির আমলে নারীদের আসন বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সেই ধারায় নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চলছে। এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। কেননা বিএনপির বিরুদ্ধে একটা অদৃশ্য প্রতিপক্ষ ধীরে ধীরে দৃশ্যমানের দিকে যাচ্ছে, সঙ্গে আরও কিছু প্রতিপক্ষ তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। সেটা মোকাবিলা করার সক্ষমতা রয়েছে বিএনপির। এজন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকতে হবে।

কর্মশালায় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীনের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, পঞ্চগড় থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির পল্লি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদসহ দিনাজপুর জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল প্রমুখ।

আরআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিয়েবাড়িতে কেন অস্বস্তিতে পড়েছিলেন অভিনেতা সাইফ? Dec 18, 2025
img
দেশের বাজারে কত দামে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে আজ? Dec 18, 2025
img
সীমান্ত দিয়ে কোনো দুষ্কৃতকারী দেশ ত্যাগ করে বের হতে পারবে না Dec 18, 2025
img
অমিতাভকে ব্যক্তিগত প্রশ্নে চমকে দিলেন কার্তিক! Dec 18, 2025
img
বিনা অনুমতিতে নির্বাচন নিয়ে সভায় সৌদিতে আটক কয়েকজন বাংলাদেশি Dec 18, 2025
img
বিশ্বব্যাংকের সালিশি আদালতে এস আলমের বিরুদ্ধে লড়বে সরকার : গভর্নর Dec 18, 2025
img
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ৯০১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিল পাস Dec 18, 2025
img
২০২৫ সালে ৫,০০০০০ সেনা হারিয়েছে ইউক্রেন : রাশিয়া Dec 18, 2025
img
১২ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ Dec 18, 2025
img
আরও ভয়াবহ সংকটে গাজাবাসি Dec 18, 2025
img
মাগুরায় আ.লীগ নেতা রেজাউল গ্রেপ্তার Dec 18, 2025
img
বাংলাদেশি শিল্পীদের কাজ ‘চেটেপুটে খাই’ : সোহিনী Dec 18, 2025
img
৩৭১ রান সংগ্রহ অস্ট্রেলিয়ার, আর্চারের ৫ উইকেট Dec 18, 2025
img
আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে ঢাকার আকাশ Dec 18, 2025
img
৩ জেলায় দুদকের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান Dec 18, 2025
img
নিরাপত্তা শঙ্কায় বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল Dec 18, 2025
img
নীলফামারীতে আওয়ামী লীগের ৪ নেতা গ্রেপ্তার Dec 18, 2025
img
ওসমান হাদিকে গুলি মানে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর আঘাত : আল মামুন Dec 18, 2025
img
মেক্সিকোর পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতাদের হাতাহাতি Dec 18, 2025
img
চেষ্টার পথেই বিশ্বাসী প্রতীক সেন Dec 18, 2025