শ্রীলঙ্কার ৩ নাগরিক উদ্ধার, প্রশংসায় ভাসছেন ডিআইজি

ব্যবসায়িক আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসে অপহরণের শিকার তিন শ্রীলঙ্কান নাগরিককে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের মাধ্যমে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৩ এপ্রিল) বাগেরহাট থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপহরণের পরিকল্পনাকারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর এ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল হক।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৪টায় খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডিআইজি মো. রেজাউল হক।

তিনি বলেন, ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় আমি নিজে ওই দিন রাত ১০টায় অভিযান পরিচালনা করি। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদ হোসেন, ওসি মোল্লাহাট এবং ফকিরহাটকে সঙ্গে নিয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় কাজী এমদাদের বাড়ি থেকে অপহৃত তিন বিদেশি নাগরিককে উদ্ধার করেছি। পরে গ্রেপ্তার এমদাদকে সঙ্গে নিয়ে বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার পরিকল্পনাকারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করি।

মো. রেজাউল হক বলেন, শ্রীলঙ্কান হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের নিরাপদে সেখানে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অধিক তদন্ত চলছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শ্রীলঙ্কান নাগরিক মালাভি পাঠিরানা ওরফে নিহাল আনন্দ মাছের ব্যবসা করতেন মালদ্বীপে। সেখানেই তার কর্মচারী ছিলেন বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার দক্ষিণ আমবাড়ি গ্রামের সবুর শেখের ছেলে শহিদুল শেখ (২৪)। ওইখানেই পাঠিরানার ম্যানেজার নিলের সঙ্গে পরিচয় হয় শহীদুলের।

নিজ গ্রামের মাছ ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি হয় জানিয়ে মালিককে বাংলাদেশ থেকে মাছ রপ্তানিকরার ব্যবসায়ে প্রলুব্ধ করেন শহীদুল। শহীদুল দেশে চলে আসলে সামাজিক মাধ্যমে একাধিকবার কথা হয় নীল ও তার কোম্পানির মালিক পাঠিরানার সঙ্গে।

গত ২২ এপ্রিল স্ত্রী টিকিরি কুমারীহা এবং থুপ্পী মুডিয়ানসিলা নীলকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন পাঠিরানা এবং বাগেরহাটের মোল্লাহাটের দক্ষিণ আমবাড়ি গ্রামে শহীদুলের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য ও একই গ্রামের বাসিন্দা কাজী এমদাদ এবং চরকুড়িয়া এলাকার এস এম শাহাবুদ্দিনের ছেলে শামসুল আলম (৪৫) ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার খাটিয়াগড় গ্রামের জাকির শেখের ছেলে জনি শেখ (৩৮) মিলে ওই তিন শ্রীলঙ্কান নাগরিককে একটি কক্ষে আটকে রাখেন।

মোল্লাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা নাসিরের আপন ভাই শামসুল আলমের পরিকল্পনায় তাদের কাছে চাওয়া হয় পাঁচ লাখ ডলার। না দিলে মেরে লাশ গুম করে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। নানানভাবে ভয়ভীতি দেওয়ার পর বাংলাদেটি টাকায় আড়াই কোটি টাকা দিতে রাজি হয় পাঠিরানা।

টাকা নেওয়ার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য কাজী এমদাদের আইএফআইসি ব্যাংকের তিনটি অ্যাকাউন্ট নাম্বার পাঠানো হয় শ্রীলঙ্কায়। পাঠিরানার এ অপহরণের খবর প্রথমে শ্রীলঙ্কান হাইকমিশন পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে আসে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। পরে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া পাঠিরানা সাংবাদিকদের জানান, তাকে ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আসার পর তাকে আটকে রেখে টাকা দাবি করা হয়। তাদের নিরাপদে উদ্ধার করতে পারায় পুলিশের প্রশংসা করেন এই বিদেশি ব্যবসায়ী।

এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
সারার সংবেদনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন, শোকবার্তার সঙ্গে কাশ্মীর সফরের ছবি ঘিরে বিতর্ক Apr 25, 2025
img
প্রেমের বাঁধনে বলিউড ও পাকিস্তান: আলোচনায় সুস্মিতা-ওয়াসিম থেকে রণবীর-মাহিরা Apr 25, 2025
img
‘দরজা বন্ধ করে শুতে হবে’—বাড়িতে নিরাপত্তা জোরদার, তবে কি আতঙ্কে সাইফ আলি খান? Apr 25, 2025
img
শয়তানের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ হলেও আ.লীগের সঙ্গে নয় : টুকু Apr 25, 2025
img
‘রাজপথে প্রথম আমি বুক পেতে দাঁড়াই, পরবর্তীতে ১৬ জুলাই আবু সাঈদ ভাই শহীদ হন’ Apr 25, 2025
img
জুলাইকে নিয়ে কিছু গোষ্ঠী ব্যবসা করতে চাচ্ছে: নুরুল হক নূর Apr 25, 2025
img
সাত কলেজের ‘সম্মানজনক পৃথকীকরণের’ চূড়ান্ত অনুমোদন Apr 25, 2025
img
ধর্ষণ মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড Apr 25, 2025
img
এবার ভারতীয় বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান Apr 25, 2025
img
বিচারকের সই জাল করে ভুয়া হলফনামা, রিমান্ডে আইনজীবী Apr 25, 2025