রাজশাহীর বাজারে চড়া দামে রসালো ফল লিচু

গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে যখন চারপাশ পুড়ছে, তখন রাজশাহীর বাগানগুলোয় শুরু হয়েছে রসের নীরব উৎসব। ঝলমলে রোদে গাছের ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় লিচু। যদিও আমের মুকুল ঝরে পড়ে হতাশা তৈরি করেছে, তবুও লিচুর ফলনে খুশির সুরে সেজেছে চাষিরা। মৌসুমের প্রথম লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে, তবে দেশি লিচুর দাম এখনো বেশ চড়া।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার এলাকায় দেশি এই লিচু বিক্রি করতে দেখা যায়। অগ্রিম বাজারে আসায় কোনো কোনো ক্রেতা কিনলেও কিছুটা টক ও দাম বেশি হওয়ার কারণে কম বিক্রি হচ্ছে।

লিচু বিক্রেতা আব্দুল্লাহ জানান, ১০০টি লিচু বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। বাগানেই দাম বেশি হওয়ার কারণে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। তবে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী লিচুর আমদানি হলে দাম কিছুটা কমবে বলে ওই বিক্রেতা জানান। টক নাকি মিষ্টি, এমন প্রশ্নের জবাবে লিচু বিক্রেতা জানান, দেশি লিচু হওয়ায় খুব বেশি মিষ্টি নয়। কিছুটা টক হবে। কয়েকদিন পর যেগুলো বাজারে আসবে সেগুলো মিষ্টি বেশি হবে। সাহেব বাজার ছাড়াও নগরের আরও ২/১টি বাজারে লিচু বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে কোনো স্থানেই ১০০ লিচুর দাম ৫০০ টাকার কমে বিক্রি হতে দেখা যায়নি।

ইয়াজ উদ্দীন নামের এক লিচু ক্রেতা বলেন, বাজারে এই প্রথম লিচু এসেছে, তাই ৫০টি কিনলাম ২৫০ টাকায়। দাম কমায়নি বিক্রেতা। টক নাকি মিষ্টি তা জানি না।

এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে, যার উৎপাদন ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।

কৃষকরা বলছেন, এবার আবহাওয়া ছিল অনুকূলে, তাই আঁঠি ও বোম্বাইসহ সব জাতেই এসেছে বাম্পার ফলন। আগামী ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই রাজশাহীর বাজারে ভেসে আসবে আঁঠি জাতের লিচুর গন্ধ। তারপর আসবে বোম্বাই, চায়না-৩ আর মাদ্রাজি। যদিও আমের তুলনায় লিচুর চাষ অর্ধেকেরও কম, তারপরও এবারের উৎপাদনে চাষিরা আশায় বুক বেঁধেছেন।

পবা উপজেলার কাঁঠাখালি এলাকার চাষি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এবার প্রচুর মুকুল ঝরে যাওয়ায় আমে তেমন লাভ হবে না। তবে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে, আশা করছি এবারে ভালো লাভ হবে।’ তাঁর প্রায় ৫০টি গাছে বাম্পার ফলন হয়েছে। আঁঠি জাতের লিচু কিছুটা টক হলেও বাজারে এর দাম কমে না ২৫০ টাকার নিচে।

পুঠিয়া উপজেলার নামাজ গ্রামের চাষি আনছার আলী জানান, এবার প্রতিটি মাঝারি গাছ থেকে তিন-চার হাজার লিচু মিলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওজনে যা দাঁড়াবে দেড় থেকে দুইশ কেজি। তবে আমরা চাষিরা সংখ্যায় হিসাব করি, ওজনে নয়।’ তিনি আরও বলেন, গড়ে সাত-আট হাজার টাকা দাম উঠবে প্রতি গাছ থেকে, আর বোম্বাই জাতের গাছে আয় হবে আরও বেশি।

বাগমারা উপজেলার চাষি মোল্লা আলতাফ হোসেন জানান, তাঁর ৩০০ গাছের বাগানে এবার লিচুর হাসি ফুটেছে। আশা করছেন, অন্তত ১৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে। গত বছরও ১০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়েছিল এই বাগান থেকে।

উপশহরের লিচু ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান জানান, ১২-১৫ বছর ধরে তিনি বাগান লিজ নিয়ে ব্যবসা করছেন। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে, ফলে লাভের মুখ দেখার আশায় আছেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর জেলায় ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে, যার ফলন ধরা হয়েছে প্রায় ৩৮০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাগমারা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮২৫ মেট্রিক টন।

এছাড়া পুঠিয়ায় ৭৮ হেক্টর, পবায় ৭৫, দুর্গাপুরে ৭০, মোহনপুরে ৫২, চারঘাটে ৪৫, তানোরে ৩০, বাঘায় ২৮, মতিহারে ২০, গোদাগাড়ীতে ১৯ এবং রাজশাহী নগরীতে ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। যদিও একটি লিচুগাছ পূর্ণতা পেতে সময় নেয় ৫-৬ বছর, তারপরও কৃষি বিভাগ প্রতিবছর চাষ ও ফলনের আনুমানিক হিসাব ধরে রাখে।

২০১৬-১৭ সালে রাজশাহীতে ৪৮৯ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছিল, যার উৎপাদন ছিল ২ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন। সেখান থেকে প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে লিচুর চাষ ও ফলন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, রাজশাহীর লিচু স্বাদে-গন্ধে অনন্য। এখানকার লিচু দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে একটু আগেই বাজারে আসে, তাই চাহিদাও বেশি থাকে। এবার রাজশাহীতে লিচুর ভাল ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো দুর্যোগের কবলে না পড়লে কৃষকরা লাভবান হবেন। প্রতি বছর রাজশাহীতে লিচু চাষ বাড়ছে।

লাভ হওয়ায় কৃষকরা লিচু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

আরএম/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
শিগগিরই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান : সালাহউদ্দিন Dec 02, 2025
img
ডিবি অফিসে যাওয়া ব্যক্তির বট আইডিগুলো আগে বন্ধ করা দরকার : আবিদুল ইসলাম আবিদ Dec 02, 2025
img
খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র ও ঐক্যের অনুপ্রেরণা : গয়েশ্বর Dec 01, 2025
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করেছে এনসিপি Dec 01, 2025
img
ঢাকার মালিকানায় শাকিব খান, থাকবেন ম্যাচেও Dec 01, 2025
ব্যর্থ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টাদের কাছে তারেক চ্যালেঞ্জ: রুমিন ফারহানা Dec 01, 2025
img
দুঃসংবাদ পেল ভারত Dec 01, 2025
img
শুভ ও ঐশীর অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরালের মাঝেই নতুন খবর! Dec 01, 2025
img
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফের বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড Dec 01, 2025
img
আবারও বাড়ল সোনার দাম Dec 01, 2025
img
মায়ের হাত ধরেই উদিতের সুরের যাত্রা শুরু Dec 01, 2025
img
অপপ্রচারের অভিযোগে ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত ডাকসু নেতারা Dec 01, 2025
img
কোহলি রোহিতে মুগ্ধ ভারতীয় দলের তারকারা Dec 01, 2025
img
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে নরেন্দ্র মোদির উদ্বেগ, দ্রুত আরোগ্য কামনা Dec 01, 2025
img
বউয়ের ভয়ে অন্য নায়িকাদের সঙ্গে রোম্যান্স করতে হাত কাঁপে : কপিল শর্মা Dec 01, 2025
img
এক বছর পর সুখবর দিলেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মেহরাব Dec 01, 2025
img
সামান্থার বিয়ের আংটির দাম কত? Dec 01, 2025
img
আমার ক্যারিয়ার দুর্ঘটনার মতো : শাহিদ কাপুর Dec 01, 2025
img
খালেদা জিয়া আপোষহীন না হলে দেশটা ‘ভারতের দখলে চলে যেতে পারত’: তাহের Dec 01, 2025
img
জীবনে আর কখনোই খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন করবো না: ডা. এজাজ Dec 01, 2025