যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি টেসলার সিইও ইলন মাস্ককে গোপন সামরিক ব্রিফিং থেকে প্রত্যাখ্যান করার পর, মাস্কের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ঘটনাকে এলন মাস্কের জন্য একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ও ‘মাগা ম্যান’ হিসেবে পরিচিত কট্টর ডানপন্থী বিশ্লেষক স্টিভ ব্যানন।
বিষয়টি প্রথম উঠে আসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন থেকে, যেখানে বলা হয়, ২০২৫ সালের মার্চে ইলন মাস্ককে একটি গোপনীয় ব্রিফিং-এ আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা ছিল, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্ভাব্য সংঘাত নিয়েও আলোচনা থাকত।
ডেমোক্রেটদের কড়া প্রতিক্রিয়া: মাস্ককে ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ বললেন অনেকে
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে আখ্যা দেন। কারণ, মাস্কের নেতৃত্বাধীন টেসলার চীন শাখা এবং স্পেসএক্সের বৈশ্বিক কার্যক্রম—বিশেষ করে কিছু উপগ্রহ প্রযুক্তি—নাকি যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তথ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
‘প্রচুর সম্পদশালী কিন্তু অনির্বাচিত এক ব্যক্তি কীভাবে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারেন? এটা মেনে নেওয়া যায় না,’ টুইট করেন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন।
ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল পোস্ট: ‘ইলন পেন্টাগনে যাচ্ছেন না’
এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে জানান, ‘এলন কোথাও যাচ্ছেন না, পেন্টাগনের কোনো গোপন বৈঠকে তার কোনো স্থান নেই। এমনকি চীনের কথাও সেখানে উঠবে না।’
এই ঘোষণাকেই স্টিভ ব্যানন মনে করেন “যেখানে মাস্কের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কে ‘ভাটা পড়লো’।”
‘DOGE’ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন মাস্ক, ফিরে যাচ্ছেন প্রাইভেট ভেঞ্চারে
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (DOGE)’—যা মূলত সরকারি ব্যয় কমানো ও প্রশাসনিক সহজীকরণে কাজ করছিল—সেই উদ্যোগে মাস্কের সম্পৃক্ততা উল্লেখযোগ্য ছিল।
তবে ট্রাম্পের ঘোষণার পর মাস্ক নিজেই টুইটারে লেখেন, ‘আমার অগ্রাধিকার এখন টেসলা, স্পেসএক্স এবং এক্স (আগে টুইটার) নিয়ে ভবিষ্যত নির্মাণ। আমি সরকারে সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে সরে আসছি।’
তিনি রাজনৈতিক অনুদানও কমিয়ে দেওয়ার কথা জানান।
DOGE প্রকল্প অবশ্য চালু থাকবে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কারোলিন লেভিট বলেন: ‘DOGE কর্মীরা তাদের নির্ধারিত সংস্থাগুলোতে কাজ চালিয়ে যাবেন। সরকারের অপচয় ও জালিয়াতি দূর করতে DOGE-এর মিশন চলবে।’
তবে মাস্ক-ট্রাম্প বন্ধুত্ব অটুট
যদিও মাস্ক সরকার থেকে কিছুটা পিছু হটেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এখনো দৃঢ়। মে মাসের শুরুতে মাস্ক ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়েছিলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও হোয়াইট হাউজ বৈঠকে অংশ নেন।
এই ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দেয়, মাস্ক এখনও পরোক্ষভাবে হলেও প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা হিসেবে রয়েছেন।
বিশ্ব রাজনীতিতে করপোরেট শক্তি ও রাষ্ট্রশক্তির মিশেল নতুন কিছু নয়, তবে ইলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী উদ্যোক্তার রাষ্ট্রের গোপন তথ্যপ্রাপ্তি বা নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এই ইস্যুটি আগামী নির্বাচনের আগে একটি বিতর্কে পরিণত হতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
আরএম/এসএন