স্বাস্থ্য খাতে কিছুটা হলেও বরাদ্দ বেড়েছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ৫০১ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় সংসদে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন, যেখানে এই স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের তথ্য তুলে ধরা হয়।
তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি নাগরিককে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে সেবার পরিধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দক্ষ জনবল নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের শূন্য পদ পূরণে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন পদ সৃষ্টির জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবায় অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, নতুন অর্থবছরে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদেশে কর্মসংস্থানেও নজর
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুযায়ী কেয়ারগিভার (সেবাপেশাজীবী) প্রশিক্ষণের উদ্যোগ। উন্নত দেশগুলোতে এই খাতে চাহিদা বাড়ছে। সেই চাহিদা পূরণে দেশীয় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, অন্যদিকে প্রবাস আয়ের নতুন দ্বারও খুলবে।
এছাড়া নার্সিং শিক্ষায় পিএইচডি কোর্স চালু এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নার্স শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলেও বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের বাজেটটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর বাজেটের তুলনায় ভিন্ন।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।
এবারের বাজেট উপস্থাপনে সংসদ না থাকায় কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। তবে ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জনমত নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে, আর সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। চূড়ান্তকরণের পর যেকোনো একদিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
আরএ/টিএ