দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সঞ্চয় ক্ষমতা বাড়াতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা ৩৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিতে এসব তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বহুমুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু নতুন জাত উদ্ভাবন, উন্নততর চাষাবাদ প্রযুক্তি প্রচার, সুলভমূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং সেচ এলাকা সম্প্রসারণসহ যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।
খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গুদাম ও কোল্ড চেইন ব্যবস্থার উন্নয়নেও জোর দেওয়া হবে। দেশের বাজারে খাদ্যের সরবরাহ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার আরও দক্ষতা আনার জন্য পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি, বিশেষায়িত কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল স্থাপন এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের দ্রুত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সার আমদানির পাশাপাশি দেশে ইউরিয়া সার উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি চালু রয়েছে, যা কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। কৃষি পণ্যের অপচয় কমাতে প্যাকেজিং, হিমাগার ও কোল্ড চেইন অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি কৃষি পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং সাপ্লাই চেইনের প্রতিটি পর্যায়ে তথ্যভিত্তিক ডাটাবেইজ তৈরির কাজ ত্বরান্বিত করা হয়েছে। বিশেষায়িত কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি পণ্যকে আরও মানসম্মত ও বাজার উপযোগী করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলছে। দেশের ১ হাজার ৯০১টি ওএমএস কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রয়োজনমতো সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য প্রতি কেজি গম মাত্র ১৯ টাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট’ কর্মসূচির আওতায় ১০ লাখ ৪০ হাজার দুস্থ নারীকে মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরে খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ৩৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা এবং খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।
আরএ/টিএ