রাষ্ট্রের মূলনীতি নির্ধারণে মুজিববাদী সংবিধানে থাকা চার মূলনীতি বাতিল চায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। এদিকে জাতীয় ঐকমত্যের কারণে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি তরুণদের এই দলটি।
রবিবার (২২ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন এনসিপির প্রতিনিধিরা।
রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে একটা ঐকমত্য ছিল যে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদটা সীমিত করা প্রয়োজন।
আমাদের বর্তমান যে ব্যবস্থাটা আছে সেটা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এটা নিয়ে দুইবার বা দুই মেয়াদ নিয়ে আলোচনা চলছিল, আরেকটি প্রস্তাব এলো সর্বোচ্চ একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় কত বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করলে হয়তো ভালো হবে। সবাই আলোচনা করে অনেকেই একটা জায়গায় চলে আসে যে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। এনসিপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল এক ব্যক্তি দুইবার প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নিতে পারবেন।
যদি ঐকমত্যের স্বার্থে সবাই ১০ বছরের কথা বলে সে ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণের জন্য এনসিপি ফ্লেক্সিবল থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরে আলোচনা এলো যে প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ যদি সীমিত করতে হয় এর পাশাপাশি আপার হাউস পিআর, এনসিসি এসব নিয়েও আলোচনা করতে হবে। তা না হলে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা অনেকটাই কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের পজিশন হচ্ছে এনসিসি বা সাংবিধানিক পদগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা চাইব নির্বাচন কমিশনের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান পক্ষপাতমূলক আচরণ করবে না।
তাদের নিয়োগটা হবে একেবারে নিরেপক্ষভাবে। তো সেই ক্ষেত্রে আসলে যেই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানমন্ত্রী বা এক্সিকিউটিভকে অ্যাকাউন্টেবল করার কথা তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর যদি হাত না থাকে সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাটা কমে না। বরং ওই জায়গায় ওই জুরিসডিকশনটা থাকারই কথা না। কারণ যেই প্রতিষ্ঠানগুলো এক্সিকিউটিভকে অ্যাকাউন্টেবল করবে।’
রাষ্ট্রীয় মূল নীতির বিষয়ে যুগ্ন সদস্য সচিব জাবেদ রাসেল বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের একটা প্রস্তাব ছিল যে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের যে মূলনীতি ছিলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার।
এরসাথে গণতন্ত্রকে যুক্ত করে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। একইসাথে ঐকমত্য কমিশনের একটা সুপারিশ ছিলো ৪টি মূলনীতি যুক্ত থাকবে। সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা মতানৈক্য দেখা গেল যে এটা কি ৭২ এর যে ৪টি মূলনীতির সাথে যুক্ত থাকবে নাকি এটি বাদ দিয়ে যুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, এ নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছিলো আমাদের জায়গা থেকে আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে ৭২ এর মুজিববাদী মূলনীতি আমরা রাখার পক্ষে না। এই ৪টি মূলনীতি বাদ দিতে হবে, এটি বাদ দিয়ে পরবর্তীতে এই ৪টি মূলনীতি রাখার পক্ষে আমাদের আপত্তি নেই। কিছু রাজনৈতিক দল তাদের আদর্শিক জায়গা থেকে এ ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। আমরা সে ক্ষেত্রে বলেছি যে, আমাদের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তী যে স্পিরিট সে স্পিরিটের বিপরীতে গিয়ে এখানে আলোচনা করার কোনো মানে হয় না।
তিনি আরো স্পষ্ট করে বলেন, আমাদের অবস্থানের ক্ষেত্রে স্পষ্ট ৭২ এর মূলনীতি আমরা বাতিল চাই। বাকি মূলনীতির বিষয়ে আমরা ওপেন আছি। আমরা সেক্ষেত্রে ধর্ম নিরপেক্ষতার বদলে যদি অন্য কোনো শব্দ এখানে আনা হয় অথবা অন্য কোনো মূলনীতির বিষয়ে আমরা ওপেন আছি কিন্তু আমাদের মূল পয়েন্ট হচ্ছে ৭২এর ৪টি মূলনীতি বাদ দিতে হবে।
টিকে