ভাগ্য কাকে কখন কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়, তা বলা মুশকিল! ভাগ্য সহায় হলে কেউ যেমন রাতারাতি কোটিপতি বনে যেতে পারেন তেমনি অনুকূলে না থাকলে তা হারাতেও পারেন অনায়াসেই। এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল বিহারের সুশীল কুমারের সঙ্গে।
২০১১ সালে বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ (কেবিসি)-তে অংশ নিয়েছিলেন সুশীল। তিনি ছিলেন কেবিসির প্রথম প্রতিযোগী যিনি কি না পাঁচ কোটি রুপি জিতেছিলেন এই শো থেকে। অল্প বয়সে কোটিপতি বনে গিয়েছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সেই যুবকটি। কিন্তু সময়ের ফেরে আবার দুরবস্থায় তিনি। কীভাবে তাঁর সেই অবস্থা হয়েছিল?
২০১১ সালে ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুশীল। স্বপ্ন ছিল আইএএস অফিসার হবেন। এরমধ্যেই কেবিসি-তে অংশগ্রহণ করেন। অমিতাভের একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিয়ে পাঁচ কোটি রুপি পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। কেবিসি জেতার পর রাতারাতি বদলে যায় সুশীলের জীবনযাপন। প্রচারে থাকাঁটা বেশ উপভোগ করতেন।
এলাকায় ‘তারকা’ তকমাও পান তিনি। দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবেও ডাক পড়তে শুরু করে সুশীলের।
কিন্তু তারকা তকমা পাওয়ার পর পড়াশোনা নিয়ে আর মাথা ঘামাননি আইএএস হতে চাওয়া সেই সুশীল। সেই প্রস্তুতির চেয়ে বরং তিনি সারাক্ষণ খোঁজ রাখতে শুরু করেন কোন পত্রপত্রিকায় তাঁকে নিয়ে কী খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
ভেবেছিলেন, এভাবেই তাঁর বাকি জীবন কেটে যাবে। অ্যাকাউন্টে থাকা পাঁচ কোটি রুপি নিয়েও চিন্তা বাড়তে থাকে সুশীলের।
এর পরেই বড় ভুল করে বসেন সুশীল। এলাকায় ‘তারকা’ তকমা পাওয়ার পর পরিচিতি বাড়তে শুরু করলে তার মধ্যে যে যেখানে বলতেন, সেখানেই অর্থ বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। একই সঙ্গে প্রায়শই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে বড় অঙ্কের টাকা দান করতে শুরু করেন সুশীল। সবকিছুর মধ্যে পরিবার থেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকেন তিনি। কাছের মানুষের কাছে তিনি যেন হয়ে উঠেন অচেনা।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টাকা দেওয়া, যেখানে-সেখানে বিনিয়োগ শুরু করার পর প্রায় সব জায়গায় থকতে শুরু করেন সুশীল। এভাবেই যেখানে সেখানে টাকা খরচ করে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন সুশীল। সর্বস্ব হারিয়ে কোটিপতি সুশীল সংসার চালাতে গরুর দুধ বিক্রি করা শুরু করেন।
একটা সময় অবস্থা এমনই হয় যে, বাড়ির লোকের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় সুশীলের। এরপর তার স্ত্রী রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
এরপর সিগারেট এবং মদে আসক্ত হয়ে পড়েন সুশীল। ছবি পরিচালনার কাজেও ঝুঁকেছিলেন একবার। কিন্তু ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি সেখানেও।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুশীল বর্তমানে একটি স্কুলে পড়ান। পাশাপাশি বাড়িতেও ছাত্র পড়ান।
২০২০ সালে একটি ফেসবুক পোস্টে নিজের অসহায়তার কথা জানিয়েছিলেন সুশীল। দীর্ঘ সেই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘এলাকায় আমি তারকা হয়ে গিয়েছিলাম। ১০-১৫ দিন অন্তর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমার ডাক পড়ত। কিন্তু এর জন্য আমার পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়।’
তিনি দাবি করেছিলেন, ‘প্রচুর মানুষ আমার সঙ্গে প্রতারণা করা শুরু করলেন। আর এ সবের মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকল। ও আমাকে সাবধান করত, ভবিষ্যতের জন্য ভাবতে বলত। কিন্তু আমি পাত্তা দিইনি বরং এ নিয়ে প্রায়শই ঝগড়া হত।’
এক সময় প্রচারের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও এখন সবকিছু থেকে বেশ দূরেই থাকেন সুশীল।প্রচারমাধ্যমের কাউকে দেখলে বিরক্ত হন। এড়িয়ে চলেন পরিচিতদেরও। কোনও রকমে চালিয়ে নিচ্ছেন সংসার।