যুক্ত হওয়ার পরে বুঝতে পারি, ওই প্ল্যাটফর্ম খুবই অগোছালো: উমামা ফাতেমা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেছেন, 'আমার প্রত্যাশা ছিল, সেখানে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) গেলে অনেকগুলো জরুরি প্রশ্ন তুলে ধরতে পারব, নারীদের আরও ভালো প্রতিনিধিত্ব করতে পারব। কিন্তু যুক্ত হওয়ার পরে আমি বুঝতে পারি, ওই প্ল্যাটফর্ম খুবই অগোছালো ও ঝামেলপূর্ণভাবে চলছে। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হলেও সংগঠনটি চলছিল দু-তিনজন নেতার কথায়, অন্যদের কথা বলার সুযোগ ছিল না।'

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

উমামা ফাতেমা বলেন, 'গণ-অভ্যুত্থানের অল্প কিছুদিন পরই আমি ছাত্র ফেডারেশন ছেড়েছিলাম। আমার উপলব্ধি হয়েছিল, দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার সময় এসেছে। তখন নির্দিষ্ট কোনো সংগঠন নয়, আমি দেশের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম। অভ্যুত্থানের কয়েক দিন পর বন্যা হয়েছিল, আমরা বন্যার ত্রাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও ত্রাণ পাঠানোর কাজ করেছিলাম।
সেই সময় আমরা মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলাম। এ রকম আরও অনেক কাজের মাধ্যমে আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেশি বেশি সম্পৃক্ত থাকতে চেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, অভ্যুত্থানের পরে দেশ একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং আমাকে সেটার মধ্যে থাকতে হবে। দেশের জন্য আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।

এ রকম সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা আমাকে দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলে এবং আমাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার আশ্বাসও দেয়। বড় প্ল্যাটফর্মে দেশের জন্য কাজ করার আগ্রহ ও দায়বদ্ধতা থেকে আমি সেখানে যুক্ত হয়েছিলাম।'

তিনি আরও বলেন, 'আন্দোলন-অভ্যুত্থানের সময় অনেক ভালো ছেলেমেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর থেকেই তাদের যুক্ত থাকার সুযোগ কমতে থাকে।

অন্যদিকে সুবিধাবাদীদের ভিড় বাড়ছিল, কয়েকজন নেতার ইচ্ছেমতো একের পর এক কমিটি দেওয়া হচ্ছিল। আমি এসব দেখে কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলার, কিন্তু তখন সে রকম পরিবেশ ছিল না। নেতারা নানা রেটরিক বা বিপ্লবী কথাবার্তা বললেও সংগঠনের ভেতরে আসলে ক্ষমতার কামড়াকামড়ি চলছিল। মনে হচ্ছিল, ক্ষমতার কোনো একটা অংশের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে সেখানে সারভাইভ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যেহেতু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ছিল, তাই সেখান থেকে পদত্যাগ করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার জন্য কঠিন ছিল। এ জন্য আমি একটু সময় নিয়েছি। বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি চাইনি সংগঠনে কোনো বিভক্তি হোক, পারস্পরিক সম্মানের সম্পর্ক নষ্ট হোক। এ কারণে এই সংগঠনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করতে কিছুটা সময় লেগেছে।'

আশা ভঙ্গ প্রসঙ্গে উমামা ফাতেমা আরও বলেন, 'আমি যে ধরনের পরিবর্তন চেয়েছিলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে তা সম্ভব হয়নি; বরং এই প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে অনেকে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে। এ প্ল্যাটফর্মের কথা বললে অবশ্যই স্বপ্নভঙ্গের বিষয়টি স্বীকার করতে হবে। তবে অভ্যুত্থানকারী জনগণকে নিয়ে আমি আশাবাদী। এই জনগণই ভবিষ্যতে দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আমি বিশ্বাস করি।'

কোনো একটি দলের পক্ষে এককভাবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না উল্লেখ করে উমামা ফাতেমা বলেন, 'আমি মনে করি, এনসিপি বা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের এককভাবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এটা ঠিক যে এনসিপির কোনো কোনো নেতা অভ্যুত্থানের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাই বলে তাঁরাই অভ্যুত্থানের একমাত্র স্টেকহোল্ডার নন। ফেব্রুয়ারি মাসের আগপর্যন্ত এনসিপি নামে কোনো দলের অস্তিত্ব ছিল না, তাহলে জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন এনসিপির সঙ্গে একাকার করে দেখা হবে?'

উমামা বলেন, 'কোনো দল যদি জুলাই অভ্যুত্থানকে এককভাবে নিজেদের দখলে রাখতে চায়, সেটা হবে মুক্তিযুদ্ধকে এককভাবে আওয়ামী লীগের দখলে রাখার মতো বিষয়। মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের সাধারণ জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানেও একই রকম ঘটনা ঘটেছে। এককভাবে গণ-অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব দাবি করার কোনো সুযোগ কোনো একটি দলের নেই।'

উমামা উল্লেখ করেন, 'জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে কোনো দল তাদের নিজস্ব রাজনীতি করতেই পারে, কিন্তু তারা এককভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র কেন দেবে? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে চাপ দিতে পারে বা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারে, যাতে দ্রুত জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়।'

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী দেব না : নুর Nov 08, 2025
img
১৩ নভেম্বরের লকডাউন কর্মসূচি দেওয়া পাগলের প্রলাপ: সালাহউদ্দিন Nov 08, 2025
ইসলামের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা | ইসলামিক জ্ঞান Nov 08, 2025
img
ধানের শীষের বিজয় মানেই উন্নয়ন : চৌধুরী নায়াব ইউসুফ Nov 08, 2025
আনুশকা শর্মা মুখ্য ভূমিকায়, বড় পর্দায় ফেরার প্রস্তুতি Nov 08, 2025
অশালীন নাচে মালাইকা, সমালোচনার ঝড়ে হানি সিংও Nov 08, 2025
প্রিয়াঙ্কা-সোনমের শুভেচ্ছায় ভাসলেন ক্যাটরিনা Nov 08, 2025
অভিষেক শর্মার আগ্রাসী ব্যাটিং, টিম ডেভিডকে ছাড়িয়ে বিশ্বরেকর্ড Nov 08, 2025
ইউরোপে হারের পর লা লিগায় ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত রিয়াল Nov 08, 2025
আইসিসি নিয়ম বদলে দিচ্ছে অলিম্পিকের ক্রিকেটের চেহারা Nov 08, 2025
এই গণভোটের মধ্য দিয়ে কি আইন প্রণীত হয়ে যাবে? : সালাহউদ্দিন আহমেদ Nov 08, 2025
সংস্কারের বিষয়গুলোকে জনগণকে জানাতে গণভোটের প্রয়োজন Nov 08, 2025
আমজনতার দলকে নিবন্ধন দিতে ইসিকে হিরো আলমের আল্টিমেটাম Nov 08, 2025
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে 'ভাঙচুর ও লুটপাটের' অভিযোগ! Nov 08, 2025
img
টাঙ্গাইলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাতিলের মিছিল Nov 08, 2025
img

সৌদি প্রো লিগ

রোনালদো ও ফেলিক্সের দুর্দান্ত গোল, আটে আট আল-নাসরের Nov 08, 2025
img
ভেনেজুয়েলাকে সামরিক সাহায্য করতে প্রস্তুত রাশিয়া Nov 08, 2025
img
একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি থেকে চুপিসারে সৈন্য প্রত্যাহার করলো ভারত Nov 08, 2025
img
বিএনপিই পারবে সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে : দুলু Nov 08, 2025
img
কামিন্স ফিরলেও আমিই অধিনায়ক থাকবো: মিচেল মার্শ Nov 08, 2025