বাংলায় কথা বলার কারণে তরুণকে পুশইন করল বাংলাদেশে

পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার ভারতীয় এক তরুণকে বাংলায় কথা বলার কারণে বাংলাদেশি সন্দেহে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা ২১ বছর বয়সী আমির শেখ রাজস্থানে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েন।

পরিবারের দাবি, বৈধ ভোটার আইডি ও আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও রাজস্থান পুলিশ তাকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে এবং প্রায় দুই মাস ধরে জেল হেফাজতে রাখে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, কোনো আদালতের রায় ছাড়াই বিএসএফ-এর সহায়তায় তাকে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পুশ-ব্যাক করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশের এক অজ্ঞাত স্থানে থেকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে আমির শেখ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি ভারতীয়। আমাকে আমার বাড়ি ফিরিয়ে দিন।”

এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই জালালপুরসহ গোটা মালদা জুড়ে শোক ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। আমিরের পরিবার জানায়, জীবিকার সন্ধানে তিন মাস আগে রাজস্থানে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্থানীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর, পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও তাকে ‘বিদেশি নাগরিক’ হিসেবে সন্দেহ করা হয় এবং জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আমিরের বাবা জেমস শেখ বলেন, “ভিডিও দেখে নিশ্চিত হয়েছি, ও আমার ছেলে। ওর সব বৈধ কাগজপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু তারপরও যদি ভারতীয় নাগরিকদের এভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী?”

এই ঘটনা কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক আসিফ ফারুক আজ আমিরের বাড়িতে গিয়ে বলেন, “এটি শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা বাংলার অপমান। এটা কেবল প্রশাসনিক ত্রুটি নয়—একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন।”

জেলা প্রশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে।

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘটনা ভারতের নাগরিকত্ব, ভাষাগত বৈচিত্র্য ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে এক গভীর সংকেত। বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে।

এই ঘটনাকে ঘিরে দেশের অভ্যন্তরীণ সংহতি, সংবিধানিক অধিকার এবং মানবাধিকার রক্ষার দাবিতে দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হস্তক্ষেপ এখন অত্যন্ত জরুরি।

এমআর     

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টেকনাফের গহীন পাহাড়ে বন্দি ৬৬ জনকে উদ্ধার Sep 19, 2025
img
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হেলিকপ্টারের জরুরি অবতরণ Sep 19, 2025
img
রাশিয়ায় ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি Sep 19, 2025
img
ওয়েলালাগের বাবা আর নেই শুনে ‘সরি’ বললেন নবি Sep 19, 2025
img
ঢাকায় ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতিকালে আ.লীগের ১১ জন গ্রেপ্তার Sep 19, 2025
img
সুপার ফোরে কবে কার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ Sep 19, 2025
img
দুনিথ ওয়েলালাগের বাবা আর নেই Sep 19, 2025
img
আফগানদের হারিয়ে বাংলাদেশকে নিয়েই সুপার ফোরে গেল শ্রীলঙ্কা Sep 19, 2025
img
চবি ভিসি-প্রোভিসির সঙ্গে স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা উপদেষ্টার মতবিনিময় Sep 19, 2025
img
কাশিমপুর থানা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গ্রেপ্তার Sep 18, 2025
img
জ্যান ফ্রাইলিঙ্কের রেকর্ড ফিফটিতে জিম্বাবুয়েকে হারাল নামিবিয়া Sep 18, 2025
img
ইউরোপে ‘রোহিঙ্গা সংকট’ তুলে ধরার আশ্বাস দিল প্রতিনিধি দল Sep 18, 2025
img
রাবিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল Sep 18, 2025
img
বাংলাদেশ ও চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে: প্রধান উপদেষ্টা Sep 18, 2025
নাহিদ ইসলামকে জেরা শেষে যা বললেন আসামি পক্ষের আইনজীবী Sep 18, 2025
img
আসিফ মাহমুদের নতুন এপিএস রাহাত Sep 18, 2025
img
মিথ্যা বলেছিলেন টিউলিপ: দ্য টাইমস Sep 18, 2025
img
প্রথম প্রেম মনে করার দিন আজ Sep 18, 2025
img
হিমাচলে বন্যার্তদের তোপের মুখে কঙ্গনা Sep 18, 2025
img
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির বিরোধিতা করলেন ট্রাম্প Sep 18, 2025