মহাকাশে প্রযুক্তির সীমা কোথায়—তারই এক উদাহরণ তৈরি করল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ৩৭ কোটি মাইল দূরে বৃহস্পতির কক্ষপথে থাকা জুনো মহাকাশযানের ক্ষতিগ্রস্ত ক্যামেরা মেরামত করেছে নাসা, তাও পৃথিবী থেকেই! এই অসাধারণ কীর্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আবারও প্রমাণ করলেন, দূরত্ব কোনো বাধা নয়।
২০২৩ সালে বৃহস্পতি গ্রহ প্রদক্ষিণ করার সময় তীব্র বিকিরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জুনোতে থাকা ‘জুনোক্যাম’ ক্যামেরা। এতে বৃহস্পতির চাঁদ ‘আইও’-এর নিম্নমানের ছবি পাঠাতে থাকে মহাকাশযানটি। ক্যামেরার এই ত্রুটি সমাধানে নাসা একটি অভিনব তাপপ্রযুক্তি ব্যবহার করে, যার নাম ‘অ্যানিলিং’ (Annealing)।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এনএসআরইসি সম্মেলনে নাসা জানায়, অ্যানিলিং পদ্ধতিতে ক্যামেরাটিকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয়, যাতে মাইক্রোস্কোপিক স্তরে সৃষ্ট ত্রুটি দূর হয়। এর ফলে জুনোক্যাম ফের পরিষ্কার ও উন্নতমানের ছবি তুলতে সক্ষম হয়।
কীভাবে কাজ করে অ্যানিলিং?
অ্যানিলিং সাধারণত ধাতুবিদ্যা ও পদার্থবিজ্ঞানে ব্যবহৃত এক ধরনের তাপপ্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে পদার্থের গঠনগত ত্রুটি মেরামত করা হয়। সান ডিয়েগোর ম্যালিন স্পেস সায়েন্স সিস্টেমস-এর ইমেজিং ইঞ্জিনিয়ার জ্যাকব শ্যাফনার জানান, ‘আমরা জানতাম না এটি আদৌ কাজ করবে কি না। তবে জুনোক্যামের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বাড়িয়ে ৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উত্তপ্ত করার পর দেখা যায়, ক্যামেরা আগের মতো কাজ করছে।’
এই সাফল্যের ফলে বৃহস্পতির চাঁদে সালফার ডাই–অক্সাইড, তুষারপাত ও আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ আরও স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
কীভাবে ধরা পড়ে সমস্যা?
নাসার জুনোক্যাম বিভাগের প্রধান মাইকেল র্যাভিন বলেন, ‘বৃহস্পতিকে ৫৫তম বার প্রদক্ষিণের পর ছবিতে দাগ দেখা যেতে শুরু করে। বহু প্রযুক্তি প্রয়োগ করেও সমস্যা দূর করা যাচ্ছিল না। সামনে আইও চাঁদের ক্লোজ-আপ আসবে জেনে আমরা শেষ চেষ্টা হিসেবে অ্যানিলিং প্রক্রিয়ায় যাই এবং সফল হই।’
এই অভূতপূর্ব সাফল্য ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে যন্ত্রাংশের রিমোট রিপেয়ার বা দূরবর্তী মেরামতের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
টিকে/