বিসিবির নতুন প্রোগ্রাম 'টার্ফ ম্যানেজমেন্ট' প্রধানের দায়িত্ব পেয়ে গতকালই (৯ আগস্ট) বাংলাদেশে এসেছেন টনি হেমিং। দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর আজ কাজে যোগ দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান পিচ কিউরেটর। শনিবার (১০ আগস্ট) মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে এসে একাডেমি মাঠের পিচ পরিদর্শন করেছেন তিনি। বেশকিছু বিষয়ে কথা বলেছেন মাঠকর্মীদের সঙ্গে।
টার্ফ ম্যানেজমেন্টের এই দায়িত্ব পাওয়ার আগেও বাংলাদেশে কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন হেমিং। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রধান কিউরেটর ছিলেন তিনি। অজি কিউরেটরের আমলে সিলেট স্টেডিয়াম স্পোর্টিং উইকেটের জন্য সুনাম কুড়িয়েছে অনেক। তবে গত বছর বিসিবির প্রতি অভিমান করে চুক্তির এক বছর আগেই দেশ ছাড়েন তিনি।
সম্প্রতি পাকিস্তানের বিপক্ষে হওয়া অ্যাওয়ে সিরিজে দলের সঙ্গে ছিলেন বিসিবির অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমূল আবেদীন ফাহিম। সেখানে হেমিংয়ের বানানো উইকেট দেখে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। আর সেখান থেকেই আবারও আলোচনায় হেমিং। নিয়োগ পেয়ে হেমিংও অভিমান ভেঙে যোগ দিলেন কাজে।
টার্ফ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে হেমিংয়ের কাজ দেশের সব আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের পিচ দেখাশোনা করা। সব পিচের কিউরেটররা তার কাছে রিপোর্ট করবেন এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন। এছাড়া নতুন যে কিউরেটরদেরকে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি, তাদেরও প্রশিক্ষণ দেবেন তিনি।
মূলত দেশের মাঠের পিচ উন্নয়নেই এসেছেন হেমিং। আর তার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অ্যাসাইনমেন্ট হবে মিরপুরের পিচকে ঠিকঠাক করা। গত প্রায় এক যুগের বেশি সময় এই মাঠের পিচ একেবারেই বোলিং সহায়ক হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ এবং প্রতিপক্ষের খেলায়াড় এবং কোচ এর সমালোচনা করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বোর্ড।
গত এক যুগ ধরে মিরপুরের প্রধান কিউরেটর শ্রীলঙ্কান গামিনি ডি সিলভা। পিচ নিয়ে অনেক সমালোচনা এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাজে আচরণের অভিযোগ এলেও কোনো অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এতদিনেও সরানো যায়নি গামিনিকে। শুধু তাই নয়, গত বছর অভিমান করে হেমিংয়ের দেশ ছাড়ার পেছনেও গামিনিদের শ্রীলঙ্কান সিন্ডিকেটের প্রভাবের কথা শোনা গেছে।
তবে এবার সব কিউরেটরদের বস হয়ে এসেছেন হেমিং। দেশের সব কিউরেটর তার অধীনে থাকায় গামিনিও কাজ করবেন হেমিংয়ের অধীনে। তবে হেমিংয়ের অধীনে গামিনি আদৌ থাকতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও একটা শঙ্কা আছে।
হেমিং আসার আগেই গামিনিকে সরিয়ে দেয়ার একটি গুঞ্জন উঠেছিল। আপাতত ১৭ দিনের ছুটি নিয়ে শ্রীলঙ্কায় গেছেন গামিনি। সেখান থেকে ফেরার পর তাকে আর দেখা যাবে কিনা, এ প্রসঙ্গে বিসিবি পরিচালক ইফতেখার আহমেদ মিঠু বলেন, ‘সময় বলবে গামিনি থাকবেন কি না। আপাতত তার এক বছরের চুক্তি আরও বাড়ানো হয়েছে। তবে দুই মাসের টার্মিনেশন নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সুতরাং পরিস্থিতি যেকোনও সময় বদলাতে পারে।
হেমিংয়ের সঙ্গে আমাদের দুই বছরের চুক্তি হয়েছে। তিনি পিচের মান উন্নয়নের পাশাপাশি বিসিবির কিউরেটরদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করবেন।’
বিভিন্ন সময় মিরপুরের উইকেট নিয়ে বাইরের দলগুলো অভিযোগ জানালেও বিসিবি কর্তারা এই বিষয়ে খুব একটা বিরূপ মন্তব্য করেননি। হেমিং আসার পরপরই এবার মিরপুরের উইকেট নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানালেন বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু। তার সে বক্তব্য থেকেই অনেকটা ধারণা করা যায় যে বাংলাদেশে হয়তো আর থাকা হচ্ছে না গামিনির।
মিঠু বলেন, 'এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই (গামিনিকে)। আমাদের রিয়ালেইজেশন বলতে পারেন (গামিনিকে নিয়ে)। উইকেট নিয়ে আমাদের অসন্তুষ্টি সবার মাঝেই ছিল। তার (গামিনির) সীমাবদ্ধতা ছিল। এজন্য সে ওভারকাম করতে পারেনি। আমরা যা চেয়েছি তা দিতে পারেনি। আমরা চাচ্ছিলাম একজন পারেফক্ট লোক….নিশ্চিতভাবেই আমরা জানি মিরপুরের উইকেট ইজ আ প্রবলেম। সময় এসেছে এখান থেকে বেরিয়ে আসার।
ভালো কোচ ও ট্রেনারের চাইতেও উইকেট বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভালো উইকেট থাকলে অনেক কিছু ভালো হয়ে যেতে পারতো। আমরা সেটা করতে পারিনি। এখন হয়তো সেটা হবে।’
পুরো দেশের পিচ কিউরেশনের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন হেমিং। তাই তার সিদ্ধান্তের ওপরও নির্ভর করে গামিনির চাকরি থাকবে কি থাকবে না। হেমিংকে তার বিভাগ সাজানোর জন্য সব ধরনের স্বাধীনতা দিয়েছে বোর্ড। গ্রাউন্ডস কমিটির সঙ্গে মিটিংয়ে সে তার বিষয়গুলো জানাবে৷ কাউকে আনা কিংবা বাদ দেয়ার বিষয়গুলোও এখন অনেকাংশেই তার ওপর নির্ভর করছে।
এমকে/টিএ