আজ ১৩ই আগস্ট আন্তর্জাতিক নেকড়ে দিবস। এই দিনটি নেকড়েদের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং তাদের গুরুত্ব তুলে ধরতে পালন করা হয়। নেকড়ে সাধারণত কুকুরের পূর্বপুরুষ হিসেবে পরিচিত। নেকড়ে এবং কুকুর একই প্রজাতির (Canidae) সদস্য হলেও, তারা কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
নেকড়েদের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ১৯৬৬ সাল থেকে জাতীয় নেকড়ে সচেতনতা সপ্তাহ পালন করা শুরু হয়।
ইউরোপে নেকড়ে দিবস বেশ গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়। ইউরোপে নেকড়ের প্রাকৃতিকভাবে ফিরে আসা সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সফল সংরক্ষণ কাহিনি। কয়েকটি অঞ্চলে নেকড়ের স্থিতিশীল জনসংখ্যা আগে থেকেই থাকলেও মানুষের নিপীড়নে বেশিরভাগ দেশেই এটি বিলুপ্ত হয়েছিল।
কিন্তু শিকার প্রাণীর সংখ্যা ও বনভূমি বৃদ্ধি এবং সহায়ক আইন প্রণয়নের ফলে নেকড়ের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। এর ফলে একদিকে পরিবেশগত ভারসাম্য ফিরছে। অন্যদিকে গৃহপালিত পশু শিকারের কারণে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
ইয়েলোস্টোন পার্কের উদাহরণ দেখায়, নেকড়ের উপস্থিতি হরিণজাতীয় প্রাণীর আচরণ পরিবর্তন করে যা ভূমিচিত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। স্লোভাকিয়ায় গবেষণায় দেখা গেছে, নেকড়ে অসুস্থ বুনো শূকর শিকার করে সোয়াইন ফিভার ও যক্ষ্মার বিস্তার কমায়। এ কারণে অনেকে নেকড়েকে ‘প্রকৃতির ডাক্তার’ বলেন।
ইউরোপের প্রাকৃতিক ভারসাম্যে নেকড়ের ভূমিকা বহুমুখী। তারা শিয়াল ও সোনালি শিয়ালের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে পাখি ও ইঁদুরের সংখ্যা বাড়ে।
হরিণ শিকার করে নদীর ধারে অতিচারণ কমিয়ে বিভারের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে, যা অন্য অনেক প্রজাতির জন্য উপকারী। নেকড়ে শিকারের অবশিষ্টাংশ মৃতভোজীদের খাদ্য সরবরাহ করে। এছাড়া, কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত করা বুনো শূকরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও নেকড়ে কার্যকর।
তবে মানুষের সঙ্গে সংঘাতও অব্যাহত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেকড়েকে কঠোর সুরক্ষা দিয়েছে, কিন্তু সদস্য দেশগুলো নিজেদের মতো করে এর বাস্তবায়ন করে। যেমন, স্লোভাকিয়া ও স্পেনের কিছু অঞ্চলে নির্দিষ্ট মাত্রায় নেকড়ে শিকার বৈধ ছিল। যদিও স্পেন সম্প্রতি এই কার্যক্রম বন্ধ করেছে। অনেক দেশে অবৈধভাবে নেকড়ে হত্যাও চলছে।
মানুষের বসতির কাছাকাছি নেকড়ে চলে আসার অন্যতম কারণ হলো বন নিধন, কৃষিজমি সম্প্রসারণ ও নগরায়ণের ফলে প্রাকৃতিক আবাস ধ্বংস। নতুন এলাকা খুঁজতে গিয়ে নেকড়ে প্রায়ই মানুষের এলাকায় প্রবেশ করে, যা সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ায়। এ বিষয়ে ইইউ কোর্ট অব জাস্টিস সম্প্রতি কঠোর সুরক্ষার আওতাভুক্ত প্রাণী মানুষের এলাকায় এলে কীভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে।
সহাবস্থানের পথ খুঁজতে ২০১৮ সালে ইউরোপীয়ান উইল্ডারনেস সোসাইটি ইইউ প্ল্যাটফর্ম অন কো-এক্সিস্টেন্স উইথ লার্জ কার্নিভোরস কর্মশালায় অংশ নেয়। কর্মশালায় ইইউ তহবিল দিয়ে গৃহপালিত পশু রক্ষা ও সংঘাত প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল- আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা, রক্ষণাবেক্ষণ ও অতিরিক্ত কাজের খরচে সহায়তা বাড়ানো, সরঞ্জামের সংখ্যা কমানো, আর্থিক সহায়তার শর্ত স্পষ্টভাবে জানানো, স্থানীয় পরামর্শদাতাদের যুক্ত করা এবং রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানানো।
২০২০ সালের দিকে ইইউ আল্পসের জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চলে সবচেয়ে বড় গৃহপালিত পশু সুরক্ষা প্রকল্প অনুমোদন করেছে। পাঁচ বছরে প্রায় ৫০ লাখ ইউরো সহ-অর্থায়নে প্রশিক্ষণ, সুরক্ষা ব্যবস্থা ও উন্নয়ন করা হবে। এর লক্ষ্য নেকড়ে ও গৃহপালিত পশু সম্পর্কিত সংঘাত কমানো এবং দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সহাবস্থান নিশ্চিত করা।
এফপি/এসএন