মোস্তফা ফিরোজ

জাতিসংঘে ড. ইউনূসের ভাষণে মির্জা ফখরুল খুশি হলেও জামায়াত ও এনসিপি কি খুশি?

সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, ড. মোহাম্মদ ইউনূস কেন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সফরে গেলেন—এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। বলা হচ্ছে, কেন শুধু এই তিনটি দলের ছয়জন নেতা? অন্য দলগুলো কেন নেই? কেন এই তিন দলের এমন একটি বিশেষ কম্বিনেশন? তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না কেন? তারা সফরের মাঝপথে কেন হঠাৎ করে আলাদা হয়ে গেলেন? বিভিন্ন বিতর্কের মধ্যেই ড. ইউনূস তার ভাষণ দেন। এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সফরে অন্তর্ভুক্ত করায় ‘বাংলাদেশের ঐক্য প্রকাশ পেয়েছে’। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—আসলে কি সত্যিই ঐক্য আছে?

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’-তে মোস্তফা ফিরোজ এসব কথা বলেন।

মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। তার সঙ্গে সফরে ছিলেন বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির ছয়জন নেতা। ড. ইউনূসের ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অত্যন্ত জোরালো ছিল। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আর কোনো সংশয় নেই।

আমরা খুশি যে তিনি সব রাজনৈতিক দলকে এই সফরে যুক্ত করেছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐক্য প্রকাশ পেয়েছে।’

মোস্তফা ফিরোজ প্রশ্ন রাখেন—আসলেই কি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? এই সফরে কেন শুধু তিনটি দলের নেতারা অংশ নিলেন? অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কোথায়? আর জামায়াত ও এনসিপি তো স্পষ্ট বলছে, তারা পিআর ছাড়া নির্বাচন মেনে নেবে না। এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শাপলা ছাড়া নির্বাচন করতে দেব না।

তাহলে কি তারা পুরোপুরি নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজি? নাকি তারা ভেতরে ভেতরে মেনে নিচ্ছে কিন্তু বাইরে থেকে বিরোধিতা করছে? এটা কি কেবল একটি নির্বাচনী কৌশল? এখনো বিষয়টি পরিষ্কার নয়।

তিনি বলেন, এই আলোচনা তো চলতেই থাকবে। তাহলে এখন যা বলা হচ্ছে, তাতে কতটুকু বাস্তব ঐক্যের প্রতিফলন ঘটেছে? আসলেই কি কোনো জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়েছে? নাকি শুধুই একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে তৈরি করা দৃশ্যপট?

মোস্তফা ফিরোজ মনে করেন, এই তিনটি রাজনৈতিক দলকে সফরে নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য শোডাউনের একটি পাল্টা রাজনৈতিক জবাব দেওয়া। তবে সেই শোডাউনের মোকাবেলা কতটা কার্যকর হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, জাতিসংঘ ভবনের সামনে যা ঘটেছে, সেটাকে শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে না।

একজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে মাটিতে ফেলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে—এমন দৃশ্যও প্রকাশ্যে এসেছে।বাইরের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, বিমানবন্দরে হয়রানির ঘটনা—এসব নিয়েও আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হচ্ছে—নির্বাচন নিয়ে ড. মোহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং সংস্কার প্রক্রিয়াও চলবে। বিএনপি আগে থেকেই বলছে, বিচার ও সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া তবে নির্বাচন হতে হবে সময়মতো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই ‘চলমান সংস্কার’-এর দোহাই দিয়ে নির্বাচন একের পর এক পিছিয়ে আজ প্রায় দেড় বছরের মাথায় এসে ঠেকেছে। ফলে এটিকে খুব ইতিবাচক বা প্রশংসনীয় হিসেবে দেখার যথেষ্ট কারণ নেই।

তিনি আরো বলেন, আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—বিএনপির বাইরে যে দুটি দল (জামায়াত ও এনসিপি) সফরে অংশ নিয়েছে, তারা এখনও স্পষ্টভাবে বলেনি যে, যেকোনো মূল্যে তারা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সমর্থন করছে। তারা বলছে, পিআর ছাড়া নির্বাচন নয় কিংবা শাপলা ছাড়া নির্বাচন হতে দেব না। তাহলে কি নির্বাচন নিয়ে এখনো সংশয় কাটেনি?

মোস্তফা ফিরোজ বলেন, তিনটি দলের অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বলেছেন, বাংলাদেশের ঐক্য প্রকাশ পেয়েছে, সেটিকে কতটা বাস্তব ঐক্য বলা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। যদি সত্যিকার অর্থেই ঐক্য থাকতো, তাহলে আমরা দেখতে পেতাম—এই তিনটি দলের নেতারা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে একটি যৌথ ঘোষণা দিচ্ছেন, যেখানে তারা বলছেন, আমরা ড. ইউনূসের বক্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন চাই। আমাদের মধ্যে যেসব মতপার্থক্য আছে, সেগুলো মিটিয়ে আমরা নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এমন একটি যৌথ ঘোষণা যদি আমরা পেতাম, তখন বলা যেত—হ্যাঁ, একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই ঐক্যের কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। বরং মতপার্থক্য, দ্বিধা, এবং রাজনৈতিক কৌশলই বেশি দৃশ্যমান।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘থ্রি ইডিয়টস’র র‍্যাঞ্চো মোদির গদি কাঁপাচ্ছে: কে এই সোনম ওয়াংচুক? Sep 27, 2025
img
নির্বাচনী স্বচ্ছতায় ইসির নতুন উদ্যোগ, নিবন্ধন পাচ্ছে ৭৩ সংস্থা Sep 27, 2025
img
অভিনেতা থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে প্রাণ গেল অন্তত ৩১ জনের Sep 27, 2025
img
দুর্নীতির অভিযোগে চবির ২ সহকারী রেজিস্ট্রার বরখাস্ত Sep 27, 2025
img
নাইজেরিয়ায় স্বর্ণখনিতে ধস, প্রাণ গেল অন্তত ১০০ শ্রমিকের Sep 27, 2025
img
বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাই আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি : ডিসি নারায়ণগঞ্জ Sep 27, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে এই দেশের মানুষ ভোট চায় না : জাহিদ হোসেন Sep 27, 2025
img
আ.লীগ মুখে বলে এক কথা, আর করে উল্টোটা : মঈন খান Sep 27, 2025
img
টিকটক ও এক্স-এর ওপর নিয়ন্ত্রণ চান নেতানিয়াহু Sep 27, 2025
img
পুরাতন পথে নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয় : আনু মুহাম্মদ Sep 27, 2025
img
উজবেকিস্তানে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা Sep 27, 2025
img
পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দাবি নেই: খাজা আসিফ Sep 27, 2025
img
আরেক ধাপ এগোতেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত রাজ্জাকের Sep 27, 2025
img
পারমাণবিক ঢাল-তলোয়ার আরও শক্তিশালী করতে বললেন কিম জং উন Sep 27, 2025
img
সৌদিতে ১ সপ্তাহে ২১ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার Sep 27, 2025
img

বিসিবি নির্বাচন

মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় শেষ, ২৩ পরিচালক পদের বিপরীতে লড়তে চান ৬০ জন Sep 27, 2025
উপর আল্লাহ চাইলে আবার ফিরে আসবো: ইফতেখার মিঠু Sep 27, 2025
img
থালাপাতি বিজয়ের সমাবেশে পদদলিত হয়ে বহু হতাহত, ২০ জনের প্রাণহানির আশঙ্কা Sep 27, 2025
ছেলেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা শাকিবের, আলোচনায় অপুর পোস্ট! Sep 27, 2025
৮ ঘণ্টা শিফট নিয়ে দীপিকাকে ব্যঙ্গ করলেন ফারাহ! Sep 27, 2025