প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সিঙ্গাপুর সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। গত ৩ অক্টোবর তিনি পৃথকভাবে সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অং ইয়ে কুং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান এবং শ্রমবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দিনেশ বাসু দাশের সঙ্গে তাদের নিজ নিজ কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ৫ অক্টোবর সিঙ্গাপুর ট্রেড রিলেশনস মন্ত্রী গ্রেস ফুর আমন্ত্রণে তিনি সিঙ্গাপুর গ্র্যান্ড প্রিক্সে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের নৈশভোজে যোগ দেন। ওই আসরে তার টেবিলে উপস্থিত ছিলেন সিঙ্গাপুরের শ্রম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ড. তান সি লেং, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গ্যান সিও হুয়াং এবং পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র প্রতিমন্ত্রী মুরালি পিল্লাই।
নৈশভোজ অনুষ্ঠানে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়ং, সিনিয়র মন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং, উপ-প্রধানমন্ত্রী গ্যান কিম ইয়ং, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রী ইন্দ্রাণী রাজাহ এবং জাতীয় উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী অ্যালভিন তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও বৈশ্বিক প্রবণতা নিয়ে মতবিনিময় করেন বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
এছাড়াও তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেসরকারি খাতের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন রে ডালিও, গ্র্যাবের সিইও অ্যান্থনি তান, অ্যান্টলারের সিইও ম্যাগনাস গ্রিমেল্যান্ড, জিআইসি’র সিইও লিম চৌ কিয়াত, সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জ (এসজিএক্স)-এর সিইও লো বুন চে, এভারকোরের এশিয়া চেয়ারম্যান কিথ ম্যাগনাস এবং ইন্দোনেশিয়ান চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান আনিন্দ্যা বাকরি প্রমুখ।
বিশেষ দূত তার সফরের অংশ হিসেবে আরও বৈঠক করেন এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুরের চেয়ারম্যান লি চুয়ান টেক, পিএসএ (বন্দর) এর আঞ্চলিক সিইও ভিনসেন্ট এনজি এবং পেপ্যালের আঞ্চলিক প্রধান আমির ভালিয়ানির সঙ্গে। এসব বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন সম্পর্কে সরাসরি অবহিত করেন এবং সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন।
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ দূতের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গে বলেন, তরুণ ও পরিশ্রমী জনগোষ্ঠী নিয়ে বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটি এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। তারা সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল উদ্ভাবন ও সংযোগ উন্নয়নে বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের এই অগ্রগতির পরবর্তী ধাপে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে অনলাইন বিভ্রান্তি ও ভুয়া তথ্যের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তার সফরের শেষ পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশের হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং প্রবাসী শ্রমিকদের সেবার মান সম্পর্কে সরাসরি খোঁজখবর নেন।
বর্তমানে ই-পাসপোর্ট বায়োমেট্রিকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে—যেখানে কিছুদিন আগেও অপেক্ষার সময় ছিল চার মাসেরও বেশি এবং ১২ হাজারের বেশি আবেদন জমে ছিল। এছাড়া, প্রবাসী কর্মীদের কর্মভিসা (আইপিএ) অনুমোদনের জন্য হাইকমিশনে শারীরিকভাবে হাজির হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও বাতিল করা হয়েছে, যা শ্রমিক ও তাদের নিয়োগদাতাদের জন্য এক বড় স্বস্তি এনে দিয়েছে। এই দুটি সমস্যার সমাধানে বিশেষ দূত পূর্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।