জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা ও কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল। রায় কার্যকর নিয়ে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, পলাতকদের কীভাবে ভারত থেকে দেশে ফেরত আনা হবে। এক্ষেত্রে আইনি পথে হাঁটার পরিবর্তে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। প্রয়োজনে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হওয়ার আহ্বান তাদের।
এরইমধ্যেই সাজাপ্রাপ্ত ভারতে পলাতক দুই আসামি শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকে দেশে ফেরাতে গ্রেফতারি ও সাজা পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানোর ব্যাপারে ভাবছে বাংলাদেশ। এর বাইরেও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তিকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা হবে।
তবে প্রতিবেশী এই দেশটির বর্তমান অবস্থান অনুযায়ী বলাই যায়, তাদের ফেরত পাঠাতে খুব একটা রাজি নয় ভারত। সেক্ষেত্রে কি করতে পারে বাংলাদেশ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন মনে করেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিত জাতিসংঘের মতো আন্তজার্তিক সংস্থার দ্বারস্থ হওয়া।
সে ক্ষেত্রে ভারতকে এই বিচারের স্বচ্ছতা বোঝাতে পারাকে বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আইনজীবী আহসানুল করিম। তবে আইনিভাবে জোড়াজুরি করে নয় বরং কূটনৈতিকভাবেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
আহসানুল করিম বলেন, যদিও স্বাভাবিকভাবে চুক্তি অনুযায়ী রাজনৈতিক বন্দিদের ব্যাপারে পাল্লা ভারতের দিকেই কিছুটা হেলে আছে বলে মনে হচ্ছে।
তবে এই আইনজীবী মনে করছেন হত্যা এবং গুমের মতো বিষয়ে সেটাকে রাজনৈতিকভাবে সংজ্ঞায়িত করার সুযোগ নেই।
কূটনৈতিকভাবে নিজেদের দুর্বল না ভেবে বাংলাদেশকে তার ভৌগলিক অবস্থানের ভিত্তিতে বৈশ্বিকভাবে নিজেদের জায়গা করে নেয়ার সময় চলে এসেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে আনা ৫টি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং দুটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ে শেখ হাসিনা ও কামালের দেশে থাকা সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, ষড়যন্ত্র, উসকানি ও ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়ের অভিযোগে বিচার হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে পাঁচটি অভিযোগগুলো হলো: গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে উসকানিমূলক বক্তব্য, হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ, রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা, চানখাঁরপুলে হত্যা এবং আশুলিয়ায় হত্যা ও লাশ পোড়ানো।
এগুলোর মধ্যে শেষ তিনটি অভিযোগে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আর প্রথম দুই অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়।
পিএ/এসএন