বাংলাদেশে এসে তিক্ত মধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে ২৭ বছর বয়সী ইতালির তরুণী তানিয়া মোহাম্মদ শেখ নূরের। যেই দেশের মানুষ তাকে বিপদে ফেললো, আবার সেই দেশের মানুষই তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার হতে সাহায্যও করেছে। পুরো ঘটনার বর্ণনা দিতে যেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও কিছু মানুষের ভূয়সী প্রসংশা করেছেন ইতালিরে এই তরুণী।
তিনি বলেছেন, এত দেশে ঘুরেছেন তিনি কিন্তু এর আগে এত তৎপর পুলিশ আর কোথাও দেখেননি। ১২ ঘন্টার ব্যবধানে খোয়া যাওয়া সব ফিরে পেয়ে সন্তুষ্ট তানিয়া।
পাশাপাশি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইন্টারনেট সেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। মূলত এই অব্যবস্থাপনার কারণেই বিপদে পড়তে হয় তানিয়া মোহাম্মদ শেখ নূরকে। বাংলাদেশে ৭ দিনের জন্য বেড়াতে এসে প্রথমেই পড়েন ছিনতাইকারীর খপ্পরে। কারণ তিনি বিমানবন্দরে ওইফাই ব্যবহার করতে পারেনি।
তানিয়া জানিয়েছেন আগে থেকেই উত্তরা-১৩ নম্বর সেক্টরের একটি হোটেল বুক করে রেখেছিলেন তিনি। তবে হোটেলে পৌঁছানোর জন্য রাইড শেয়ার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারছিলেন না। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওয়াইফাইয়ের তিনটি কানেকশনের একটিও কাজ করেনি।
উপায় না দেখে বিমানবন্দরের বাইরে নিজেই পরিবহন খুঁজতে বের হন। সেখানেই ঘটে বিপত্তি। বাইরে মৌখিক চুক্তিতে এক মোটরসাইকেল চালকের সাথে রওনা হন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। তানিয়া ভেবেছিলেন ওই ব্যক্তি হয়তো বিমানবন্দরের তালিকাভুক্ত কেউ যিনি পরিবহন সেবা দিয়ে থাকেন।
চালক খোরশেদ আলম তাকে গন্তব্যে না নিয়ে উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন ব্রিজের পাশে নির্জন এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে চালক আগে থেকেই তার সহযোগী শাহিন মিয়াকে অপেক্ষায় রাখেন। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর দুজন মিলে ওই তরুণীর গলা চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর তার ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যান।
এই ঘটনার পর কিছু স্থানীয় তানিয়াকে তুরাগ পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায়। ইতালির দূতাবাসে যোগাযোগ করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ এবং সব হারানো বিদেশি তরুণীকে পুলিশের পক্ষ থেকে তার ভাড়া করা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি স্থানীয় ব্যক্তি যারা তানিয়াকে পুলিশি সহায়তা নিতে সাহায্য করেছেন, তারা তাকে আর্থিস সহায়তাও দিয়েছেন যেন সাময়িক ভাবে অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে পারেন ওই তরুণী।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে টিম গঠন করে অভিযানে নামেন তারা। তরুণী যেখান থেকে মোটরসাইকেলে উঠেছিলেন, দ্রুত বিমানবন্দরের সেই পিকআপ পয়েন্ট থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট সংগ্রহ করা হয়। পরে রাতে ছিনতাইকারী দলে সদস্য চালক খোরশেদ আলম ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই ঘটনায় বাংলাদেশে ঘুরতে আসা বিদেশি ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন তা নিয়েও আলোচনার সূচনা করেছে। বিমানবন্দরের ওয়াইফাই সংযোগের সমস্যা থাকায় বিদেশি নাগরিকদের জন্য বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত যখন তাদের কাছে সঠিক যোগাযোগ মাধ্যম বা নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থার বিকল্প থাকে না।
তবে এ ব্যাপারে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিমানবন্দরের ওয়াইফাই পেতে যে কারোরই একটি ওটিপির প্রয়োজন হয়। কারও বাংলাদেশি সিমকার্ড থাকলে তার ফোনে সরাসরি ওটিপি যায়। যার মাধ্যমে তারা ওয়াইফাইয়ে যুক্ত হয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।
আর যাদের বাংলাদেশের সিমকার্ড নেই তাদের ক্ষেত্রে অথেনটিকেশনের জন্য বিমানবন্দরের কোনো হেল্পডেস্ক থেকে একটি ওটিপি সংগ্রহ করতে হবে,” বলেন বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম। তবে ইতালীয় সেই নাগরিক হেল্প ডেস্কের সাহায্য নিয়েছিলেন কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
টিএ/