বিআরটিএ এর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৪১টি ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধিত হয়। এমনও নজির দেখা যায়, একই পরিবারের চার সদস্য তিন জন আলাদা ভাবে আলাদা তিনটি গাড়ি নিয়ে কাজে বের হন। ঢাকার ৭০% রাস্তাই ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার দখলে থাকে।
পার্কিং সুবিধা থাকুক বা না থাকুক, ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে এসব ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করতে দেখা যায়না। অপরিকল্পিত ভাবে রাস্তার লেন আটকে অলস পড়ে থাকে গাড়িগুলো। আবার দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গাড়ির দৌরাত্ব দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। এবার ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারে লাগাম টানার পরামর্শ এসেছে সরকারের টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে কতটি গাড়ি চলতে পারবে তা নির্ধারণ করতে হবে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের মতো সড়ক ব্যবহারের জন্যও গাড়ির মাশুল ধার্য করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে অনুৎসাহিত করা, সহজ শর্তে গাড়ি কেনার ঋণ দেওয়া কমানো এবং অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে।
আবার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রকল্পে যে বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রবণতা রয়েছে, তা বন্ধ করা উচিত এবং রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। ব্যাটারিচালিত রিকশা, লেগুনা, দুরন্তর মতো যানগুলো বন্ধ করে বড় ও দুই তলা বাস চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থার ওপর চাপ কমাতে কিছু নতুন পরামর্শ দিয়েছে সরকার। এর আগে বৈষম্যহীন এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য ২০২৪ এর সেপ্টেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদকে টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান করে ১২ সদস্যের এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল।
৩০ জানুয়ারি, পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেন। সেই প্রতিবেদনেই ঢাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য নতুন কৌশল প্রস্তাব করেছে। চার মন্ত্রণালয়কে এক করার প্রস্তাব, রাজধানী স্থানান্তরের সুপারিশসহ, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উঠে আসে।
ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এখনই উড়ালসড়ক নির্মাণ না করার কথা বলা হয়েছে, তবে শহরের বাইরে উড়ালসড়ক ও উড়াল রেলপথ নির্মাণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহনের ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে সড়ক, রেল, নৌ ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়গুলোকে এক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, প্রতিটি মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়, যার ফলে সমন্বয়ের অভাব হয় এবং সমস্যা তৈরি হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা সূচক, বায়ুদূষণ সূচক, যানবাহনের গতির সূচকসহ আটটি বৈশ্বিক গবেষণা ও সমীক্ষায় ঢাকার অবস্থান সবসময়ই নিচের দিকে। এসব পরিস্থিতিতে, টাস্কফোর্স কমিটি পরামর্শ দিয়েছে যে, ঢাকা থেকে রাজধানী অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা যেতে পারে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে, টাস্কফোর্স কমিটি একটি সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে। এতে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ, বিআরটি, এলআরটি, মনোরেল, সাবআরবান রেল, মেট্রোরেল এবং রাইড শেয়ারিংয়ের মতো নানা ধরনের পরিবহন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে।
টিএ/