অভিশংসিত হান ডাক-সুকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদে ফেরাল দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত

দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত অভিশংসিত প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সুকে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্বহাল করেছে। এর মাধ্যমে তিন মাস পর তিনি আবারও ওই পদে ফিরে এলেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সংসদে আইনপ্রণেতাদের ভোটে অভিশংসিত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সুও অভিশংসিত হয়েছিলেন।

সোমবার (২৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত সোমবার প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সুর ক্ষমতা পুনর্বহাল করেছে। প্রায় তিন মাস আগে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসনের পর পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সাম্প্রতিক অস্থির রাজনীতিতে সর্বশেষ বড় ঘটনা এটি।

এদিকে আদালতের আদেশের পর হান ডাক-সু প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের কাছ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্বল্পস্থায়ী সামরিক আইন ঘোষণার কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি নিজেই অভিশংসিত হয়েছিলেন। মূলত আদালতের রায়ের পর সোমবার হান অবিলম্বে তার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের পদে ফিরে আসেন।

রায়ের পর হান বলেন, “সাংবিধানিক আদালতের বিজ্ঞ সিদ্ধান্তের জন্য আমি কৃতজ্ঞ”। বরখাস্ত থাকার সময় কঠোর পরিশ্রমের এসময় তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যদের ধন্যবাদও জানান।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত মন্তব্যে হান বলেন, “আমরা বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের জন্য একসাথে কাজ করব এবং ভূ-রাজনৈতিক রূপান্তরের যুগে দক্ষিণ কোরিয়া যাতে ভালোভাবে বিকশিত হতে থাকে তা নিশ্চিত করব।”

মূলত ২০২২ সালের মে মাস থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন হান ডাক-সু। আর প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের অভিশংসনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তবে এর দুই সপ্তাহের মাথায় তিনি নিজেও অভিশংসিত হন এবং সেই পদক্ষেপ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির চলমান সংবিধানিক সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারি করার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসিত করার পর প্রধানমন্ত্রী হান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মূলত দেশটিতে সেসময় যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল তা থেকে দেশকে মুক্ত করতে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল হানের।

কিন্তু বিরোধী এমপিরা অভিযোগ করেছিলেন, তিনি ইউনের অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করছেন। এরপর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে বিশৃঙ্খলার মধ্যেই তাকে অভিশংসনের জন্য ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটাভুটিতে মোট ১৯২ জন আইনপ্রণেতা তার অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। যদিও অভিশংসনের পদক্ষেপ সফল করার জন্য ১৫১টির বেশি ভোটের প্রয়োজন ছিল।

রয়টার্স বলছে, ইউনের সামরিক আইন ঘোষণা এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দেয় এবং বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিশংসন, পদত্যাগ এবং ফৌজদারি অভিযোগের মধ্যে দেশটিতে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি করে।

সোমবার আদালতের বিচারপতিরা সাত-এক ভোটে হানের অভিশংসন বাতিল করার রায় দিয়েছেন। আট বিচারপতির মধ্যে পাঁচজন বলেছেন, অভিশংসন প্রস্তাব বৈধ, কিন্তু আদালতের বিবৃতি অনুসারে, হানকে অভিশংসন করার মতো পর্যাপ্ত কারণ ছিল না কারণ তিনি সংবিধান বা আইন লঙ্ঘন করেননি।

আর দুই বিচারপতি রায় দিয়েছেন, হান — যিনি তখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন — তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব শুরু থেকেই অবৈধ ছিল কারণ সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতা এটি পাস করেননি। আর একজন বিচারপতি হানকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।


এসএস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গোপালগঞ্জে ১৪ ঘণ্টা শিথিলের পর ফের কারফিউর সময় বাড়ানো হলো Jul 19, 2025
img
নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার দাবি করলেন শিবির সভাপতি Jul 19, 2025
img
জামায়াতে ইসলামী একটি ইউনিভার্সাল ইউনিভার্সিটি : গোবিন্দ প্রামাণিক Jul 19, 2025
img
‘চকরিয়ায় এনসিপির গাড়িবহর আটকে রেখেছে বিএনপির লোকজন’ Jul 19, 2025
img
আন্দোলন সফল না হলে আমাদের কবর রচনা হয়ে যেত : খোকন Jul 19, 2025
যেভাবে তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন | ইসলামিক টিপস Jul 19, 2025
১২ দফা দাবিতে ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিকদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত Jul 19, 2025
img
ভারতের সঙ্গে ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান Jul 19, 2025
img
জামায়াত আমিরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে পাওয়া গেল সুসংবাদ Jul 19, 2025
img
মিরপুরে খেলে অনেক প্লেয়ারেরই ক্যারিয়ার অনেকটা ডাউন হয়ে গেছে : লিটন দাস Jul 19, 2025
img
আমরা চাঁদা নেব না, নিতেও দেব না: জামায়াত আমির Jul 19, 2025
img
সালাহউদ্দিনকে নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ বক্তব্য, বিএনপির বিক্ষোভ Jul 19, 2025
ক্যানসার চিকিৎসায় শক্তিশালী প্রতিরোধের আশা বাড়ালো নতুন ভ্যাকসিন Jul 19, 2025
কক্সবাজারের অন্যতম সমস্যা ছিল ‘ট্যাবলেট বদি ‘;এনসিপির পদযাত্রায় হাসনাত আবদুল্লাহ Jul 19, 2025
জামায়াতের উদ্যোগে সমাবেশস্থলে ফ্রি চিকিৎসা সেবা Jul 19, 2025
img
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না: আব্দুল্লাহ তাহের Jul 19, 2025
img
গাড়িচালক ও গৃহকর্মীর জন্য ১ কোটি টাকার বাড়ি উপহার আলিয়া ভাটের! Jul 19, 2025
img
নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৩ নেতা গ্রেফতার Jul 19, 2025
যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একাকীত্বের প্রবণতা বাড়ছে Jul 19, 2025
img
সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে ও বিচারে সহযোগিতা করুন : মাহফুজ আলম Jul 19, 2025