অবৈধ গ্যাস সংযোগের রাইজার থেকে ও পাইপ লাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণ করায় লাইনের ছিদ্র থেকে নির্গত গ্যাস মসজিদ জমা হয়। বিদ্যুতের অবৈধ লাইন ব্যবহার করতে গিয়ে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটে মসজিদে আগুন ধরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তিতাসে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিতাস গ্যাসের অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহাব এ কথা জানান। এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের হাতে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। এ সময় জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আব্দুল ফাত্তাহ, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. মামুন, তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুল ওয়াহাব তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প অবৈধ লাইনটি চালুর সময়ে জমে থাকা গ্যাস ঢুকে শর্ট সার্কিট থেকে দুর্ঘটনা ঘটে।
তিতাসের জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনটি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হবে বলে জানিয়ে বিদ্যু ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারবে না তিতাস-ডিপিডিসি। মসজিদ কমিটির অবহেলাও প্রমাণিত হয়েছে।
৪ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষ দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩৭ জনকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখন পর্যন্ত শিশুসহ ৩১ জনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক আব্দুল ওয়াহাব তালুকদারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পাঁচ দিনের সময় দেওয়া হয়। সেই হিসাবে গত ১০ সেপ্টেম্বর তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও কমিটি আরও চার কর্মদিবস সময় চায়।
বুধবার তদন্ত কমিটির প্রধান তিতাস গ্যাস ঢাকা কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) আবদুল ওয়াহাব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, তারা মাটি খুঁড়ে তিতাসের পাইপলাইনে ছয়টি ছিদ্র পেয়েছেন। ওই ছিদ্র দিয়ে গ্যাস যেখানে জায়গা পেয়েছে সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া মসজিদের কলাম বেইজ নির্মাণের সময় তিতাসের পাইপলাইনের র্যাপিং নষ্ট হয়ে মাটির সংস্পর্শে এসে পাইপ লিকেজ হয়েছে।
তিতাস বলছে, ওই মসজিদে এসি থাকায় সব জানালা দরজা বন্ধ ছিল। গ্যাসের লিকেজ থেকে অল্প অল্প করে মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমতে থাকে। সেদিন এশার নামাজের সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর মসজিদের মুয়াজ্জিন একটি লাইনে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় আরেকটি বিদ্যুতের লাইন চালু করতে গেলে সুইচে বিদ্যুৎ স্পার্ক করে। এতে মসজিদের ভেতরে জমে থাকা গ্যাসে আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। মসজিদটি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় আগুন লেগে যায় মসজিদের প্রায় প্রতিটি কোনায়। এ কারণেই হতাহতের হার অনেক বেশি হয়েছে।
আরও পড়ুন
গ্যাস থেকেই নারায়ণগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণ: ধারণা সিআইডির
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ: মৃত্যু বেড়ে ৩১
গ্যাস লাইনের উপরে মসজিদ নির্মাণ করায় বিস্ফোরণ: তিতাসের তদন্ত কমিটি
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ: তিতাসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
টাইমস/এইচইউ