নির্বাচন ঠেকাতে চলছে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত : জিল্লুর রহমান

গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও অস্থিরতার পেছনে একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত কাজ করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনার উদ্দেশ্য হচ্ছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার নামে সময়ক্ষেপণ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার পেছনে থাকা অপশক্তিগুলো এই পরিকল্পনার অংশ। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের গণতন্ত্র এবং স্থিতিশীলতা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।


সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এসব কথা বলেন তিনি। জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গোপালগঞ্জের ঘটনায় কারো দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। এনসিপি দাবি করছে- পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তবে সেনাবাহিনী না থাকলে সেদিন এনসিপি নেতাদের রক্ষা করা আদৌ সম্ভব হতো কিনা, সেই প্রশ্নও থেকে যায়।

আওয়ামী লীগের কিছু অংশ সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী যেহেতু দেশে ফিল্ডে রয়েছে এবং ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতাপ্রাপ্ত। গোপালগঞ্জের ঘটনায় তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে। পুলিশের পক্ষে এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো না।

পুলিশের মনোবল ইতোমধ্যে ভেঙে পড়েছে এবং অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে তারা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যদিও পুলিশের কিছু অন্যায় ছিল, তবে পুরো বাহিনীকে দোষারোপ করা অনুচিত। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, থানা লুট ও আগুন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো সমস্ত অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এনসিপি কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যেই যাই বলুক—সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে প্রতিরোধ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতো।’

জিল্লুর রহমান আরো বলেন, ‘গোপালগঞ্জে কর্মসূচি ঘোষণা এনসিপির কৌশলগত ভুল ছিল।

পরিস্থিতি বিবেচনা না করে কর্মসূচি দেওয়াটা ঠিক হয়নি।’

শেখ মুজিবুর রহমানের আজকের এই করুন দশার জন্য জিল্লুর রহমান শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবের নামকে ঘিরে শেখ হাসিনা দেশে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যেখানেই যান, একই ছবি, একই নাম-এটা সাধারণ মানুষের মনে একপ্রকার বিরক্তি সৃষ্টি করেছে।’

বিদেশের উদাহরণ টেনে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যেখানে শাসকের ছবি সর্বত্র, সেখানে ধরে নেওয়া হয় তিনি জনমানুষের নয়, একনায়কতান্ত্রিক ধাঁচের। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এবং তার অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই, তবে তাকে ঘিরে অতিরিক্ত প্রচারণা এবং নামকে কেন্দ্র করে একপ্রকার ‘ব্যক্তিপূজার’ যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা ঠিক হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘মুজিববাদ বলে বাস্তবিক কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ জাতিকে উপস্থাপন করা হয়নি। ৭১-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগও এই ধারাকে চর্চা করেনি। তাই মুজিববাদবিরোধী স্লোগানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও, সেটা বাস্তবসম্মত প্রতিক্রিয়া নয়। তবে গোপালগঞ্জকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো উসকানিমূলক বক্তব্য যে পরিস্থিতির বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সেটার কারণেই এ হামলার ঘটনা ঘটে।’

সরকারের সংস্কার উদ্যোগের ব্যর্থতা তুলে ধরে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ, গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের সংস্কারের কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। কমিশন রিপোর্ট জমা দিয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। পুলিশের পোশাক বদলে দিলেই মনোবল ফেরে না, ভেতরের সংস্কার জরুরি ছিল, যা করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের সংস্কার ছাড়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার যেসব সংস্কারের কথা বলছে, সেগুলো মূলত ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছু নয়।’

জিল্লুর রহমান মনে করেন, গোপালগঞ্জ, মিটফোর্ড বা দেশের অন্যত্র যে সহিংসতা ও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, তা একটি সুপরিকল্পিত ডিজাইনের অংশ। যার উদ্দেশ্য নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। এই পরিকল্পনার সঙ্গে কারা জড়িত, তা দেশের সচেতন মানুষ ইতিমধ্যেই বুঝতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া জরুরি। এর বিকল্প কিছু নেই। যত দ্রুত নির্বাচন হবে, ততই দেশের কল্যাণ হবে। একজন নির্বাচিত সরকার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে। জনগণ যাদের ভোট দেবে, তারাই ক্ষমতায় আসবে, আর সবাই মিলে তাদেরকে সঠিক পথে রাখবার চেষ্টা করা উচিত। তবে বিলম্বিত নির্বাচন দেশের জন্য চরম অকল্যাণকর।

টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দুবাইফেরত ৩ যাত্রীর কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকার পণ্য জব্দ Jul 19, 2025
img
ঘরের মাঠে গায়ানার চ্যালেঞ্জ, টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বপ্নে রংপুর Jul 19, 2025
img
বাংলাদেশি নৌকা কিনবে আলজেরিয়া, আগ্রহী বিনিয়োগে Jul 19, 2025
img
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি হবে ‘উইদাউট আওয়ামী লীগ’:হাসনাত আবদুল্লাহ Jul 19, 2025
img
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে চাপাতি হাতে প্রকাশ্যে ছিনতাই Jul 19, 2025
img
পদযাত্রা ঘিরে সংঘর্ষ: কোটালীপাড়ায় আ.লীগের ১৬৫৫ নেতাকর্মীর নামে মামলা, গ্রেফতার ১২ Jul 19, 2025
img
পান্তকে শুধু ব্যাটার হিসেবে খেলানোর পক্ষে নন শাস্ত্রী Jul 19, 2025
img
জিম্বাবুয়ে সফর থেকে ছিটকে গেলেন গ্লেন ফিলিপস Jul 19, 2025
img
ব্যাট হাতে সাকিবের ঝড়ো ইনিংসের পর অবদান বল হাতেও, প্রথম জয় পেল মিয়ামি Jul 18, 2025
img
বিসিসিআই সভাপতির দায়িত্বে আর থাকছেন না রজার বিনি Jul 18, 2025
img
রশিদ-গুরবাজদের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ Jul 18, 2025
img
জনপ্রিয়তার লড়াইয়ে শাহরুখকেও হারালেন আল্লু অর্জুন Jul 18, 2025
img
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বন্ধ করতে হবে : ফয়জুল করীম Jul 18, 2025
img
সাইয়ারার নায়ক বেছে নেওয়া হয়েছিল এক ‘দুঃসাহসিক মুহূর্তে Jul 18, 2025
img
আমার সরল বিবেচনা হলো-ড. ইউনূস সরকার ফেইল করেছে : মাসুদ কামাল Jul 18, 2025
img
শুটিং কোচের পদ থেকে রত্নার পদত্যাগ Jul 18, 2025
img
সাইয়ারা মুক্তির দিনে পলকের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া Jul 18, 2025
img
নির্বাচন ঠেকাতে চলছে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত : জিল্লুর রহমান Jul 18, 2025
img
বাংলাদেশের মাটি আ. লীগ-বিএনপির শাসন দেখতে চায় না : চরমোনাই পীর Jul 18, 2025
img
জন্মদিনে পরিবেশপ্রেমী অভিনেত্রী ভূমিকে সম্মান Jul 18, 2025