বন্যায় গাইবান্ধায় ক্ষেতেই পচেছে আব্দুর রশিদের পাঁচ লাখ টাকার সবজি

বর্তমানে দেশের অনেক এলাকায় বন্যাকবলিত। বন্যার কারণে অনেকের বাড়িঘর থেকেও নেই। বাস করতে পারছেন না নিজের ঘরে। আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে। আবার অনেকেই হারিয়েছেন তার বেঁচে থাকার অবলম্বন। বন্যার পানিতে অনেকেই ক্ষেতের ফসল হারিয়ে হয়েছেন প্রায় নিঃস্ব।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের বুরুঙ্গী গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ। প্রতিবছরই পটল, করলাসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করেন তিনি। এবছরও তিনি তার ক্ষেতে পটল ও করলা চাষ করেছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে বন্যার পানিতে ক্ষেতেই তার পাঁচ লক্ষাধিক টাকার পটল ও করলা নষ্ট হয়েছে। এছাড়া গত চার বছরের বন্যায় তার ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছর বন্যায় ফসল হারিয়ে ধারদেনা করে আবার চাষাবাদ করেন। কিন্তু আবারও ক্ষতির মুখে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যান আব্দুর রশিদ। গত চার বছর এভাবেই জীবন চলছে তার। তবে এই সময়ের মধ্যে তিনি কোনো সরকারি কোনো সহায়তা পাননি।

একই অবস্থা জেলার কয়েক হাজার কৃষকের। লাভের আশায় সবজি চাষ করে পথে বসতে হয়েছে তাদের। তাদের খোঁজ নিতে আসেননি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলার কৃষি কর্মকর্তারা। বন্যায় ফসল হারিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন তারা।

কৃষক আব্দুর রশিদ কাদো কাদো হয়ে জানান, বন্যার পানিতে গত কয়েকদিনে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার পটল ও করলা ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার আগে প্রতি সপ্তাহে ২০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতাম। কিন্তু বন্যা এসে সব শেষ করে দিলো।

তিরি আরও জানান, গত চার বছরে বন্যায় প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে আমার। অথচ কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাইনি আমি। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয় বলে শুনেছি। তবে কারা দেয় আর কারা নেয় তা আমি জানি না।

সরকারি প্রণোদনা ও সহায়তা বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জেলা কৃষি অফিস জানায়, কৃষকদের তালিকা করেন জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যাদের তালিকা দেন তারাই সরকারি প্রণোদনা, সহায়তা ও কৃষি উপকরণ পান। অন্যরা এসব পান না।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রণয়নের বিষয়ে জানতে কচুয়া ইউনিয়নের সদস্য আইয়ুব হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ছাদেকুজ্জামান জানিয়েছেন, বছরের প্রথম দফার বন্যায় উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে দুই হাজার ৮৩৩ জন কৃষকের এক কোটি ১৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। দ্বিতীয় দফার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।

সরকারিভাবে অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা নেই জানিয়ে এই কর্মকর্তা জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা দপ্তরে পাঠিয়েছি। সরকারি প্রণোদনা এলে কৃষকদের দেয়া হবে।

দ্বিতীয় দফার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে জানিয়ে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, প্রথম দফার বন্যায় জেলার চার উপজেলায় এক হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকা। ১৩ হাজার পাঁচজন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া দ্বিতীয় দফার বন্যায় প্রায় তিন হাজার ২০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: