গ্রিনল্যান্ড বিক্রির প্রস্তাব নাকচ: ডেনমার্ক সফর বাতিল করলেন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প

উত্তর মেরু এবং উত্তর আটলান্টিকের মাঝে ডেনমার্কের অধীন একটি স্বশাসিত অঞ্চল হলো গ্রীনল্যান্ড। প্রাকৃতির অপ্সরা এই গ্রিনল্যান্ডই মনে ধরেছে ব্যবসায়ি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তাই সম্প্রতি তিনি গ্রীনল্যান্ড ক্রয় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

বিশ্বের ক্ষমতাধর এই ব্যক্তির ইচ্ছার প্রতি কোন সম্মানই দেখালো না ছোট্ট (আমেরিকার তুলনায়) ডেনমার্ক! তার এই ইচ্ছাকে ‘আজব’ বলে অভিহিত করলো ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেডে ফ্রেডরিকসেন!

ফ্রেডরিকসেনের এই সাহস ভালো ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিশ্ব মোড়ল। তাই দেশটির রানির দেয়া আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়ে তার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দিল ট্রাম্প!

আগামী ২ সেপ্টেম্বর ট্রাম্পের ডেনমার্ক সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসব কথাচালাচালির পর মঙ্গলবার ট্রাম্প এক টুইটে ঘোষণা করেন যে তিনি আর ডেনমার্ক সফরে যেতে চান না। কারণ ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীগ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব নিয়ে কথা বলতে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ডেনমার্ক সফর বাতিল করা হয়েছে।

ডেনমার্কের রাজপরিবার থেকেও বলা হয়েছে, এই সফর যে বাতিল করা হয়েছে, সেটি তাদের জানানো হয়েছে। রাজপরিবারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে তারা বিস্মিত।

অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ডেনমার্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কার্ল স্যান্ডস টুইট করেছিলেন, "মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে ডেনমার্ক প্রস্তুত!"

সম্প্রতি ঘোষণার পর ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের এক ছোট্ট শহরের ছবির ওপর তার বিশাল ট্রাম্প টাওয়ারের ছবি বসিয়ে সেই ছবি পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

তবে তার এই আগ্রহ ভালো চোখে দেখেনি গ্রীনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কিম কিলসেন। তিনি বলেছিলেন, "গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ সবদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সহযোগিতার জন্য গ্রীনল্যান্ডের দরোজা খোলা আছে।"

আর ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেন বলেছিলেন, 'এটা নিশ্চয়ই এপ্রিল ফুল'স ডে'র কোন রসিকতা।"

ডেনমার্কের পিপলস পার্টির একজন মুখপাত্র সোরেন এসপারসেন বলেছিলেন, "যদি তিনি সত্যিই এরকম কিছু ভেবে থাকেন, তাহলে বলতে হবে তিনি একদম উন্মাদ হয়ে গেছেন।"

গ্রিনল্যান্ড নিয়ে এত আগ্রহ কেন ট্রাম্পের?

গ্রিনল্যান্ডের ব্যাপারে কেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এত আগ্রহ কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সেখানকার কয়লা, দস্তা, তামা এবং লোহার মতো খনিজ সম্পদ। তবে প্রাকৃতিক সম্পদে যত সমৃদ্ধই হোক, গ্রীনল্যান্ড এখনো ডেনমার্কের ওপর অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক নির্ভরশীল।

গ্রিনল্যান্ডের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার হার খুব বেশি। লোকজন সাংঘাতিকভাবে মদপানে আসক্ত। বেকারত্বের হার খুব উঁচু।

গ্রিনল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান যেরকম কৌশলগত জায়গায়, সেটাও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রহের একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় যাওয়ার একটা সোজা পথ বরাবর গ্রীনল্যান্ডের অবস্থান। কাজেই নিরাপত্তার দিক থেকে এর গুরুত্ব আছে।

গত শতকে যখন স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়, তখন থেকেই সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমান ঘাঁটি আছে। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র নানা ধরণের নজরদারি চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ঘাঁটি।

উত্তর মেরু অঞ্চলে যেহেতু বরফ গলে নতুন সমুদ্রপথ খুলে যাচ্ছে, তাই সেখানকার গুরুত্ব বাড়ছে। চীনও এখন উত্তর মেরুর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

গত বছর চীনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি গ্রিনল্যান্ডে একটি নতুন বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু সেই পরিকল্পনা থেকে তারা সরে এসেছে।

একজন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে এক চতুর ভূ-রাজনৈতিক চাল বলে বর্ণনা করেছেন।

ট্রাম্প ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের যারা গ্রিনল্যান্ড কিনতে চেয়েছিল

১৮৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টা চালিয়েছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এন্ড্রু জনসন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তখন গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেছিল, সেখানে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। কাজেই এটি কেনার জন্য একটি আদর্শ জায়গা। কিন্তু এরপর এ নিয়ে আর কোন কিছু আগায়নি। ১৯৪৬ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের সময় যুক্তরাষ্ট্র আবার গ্রিনল্যান্ড একশো মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়ার প্রস্তাব পাঠায় ডেনমার্কের কাছে। এর আগে আলাস্কার কিছু অঞ্চলের সঙ্গে গ্রিনল্যান্ড বিনিময়ের কথাও ভেবেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান।

গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান

অস্ট্রেলিয়াকে বাদ দিলে (এটি আসলে একটি মহাদেশ), গ্রিনল্যান্ড হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। এটি ডেনমার্কের একটি স্বশাসিত অঞ্চল। এর অবস্থান উত্তর আটলান্টিক আর উত্তর মেরু সাগরের মাঝখানে।

আয়তনে মূল ডেনমার্কের চেয়ে গ্রিনল্যান্ড প্রায় ৫০ গুন বড়। ডেনমার্ক থেকে এর দূরত্ব দুই হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। এর সবচেয়ে কাছাকাছি জনঅধ্যূষিত দেশ হচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ড।

গ্রিনল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৫৬ হাজার। বেশিরভাগ মানুষই উপকুল বরাবর বিভিন্ন শহরে থাকে। জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ হচ্ছে আদিবাসী ইনুইট সম্প্রদায়ের। গ্রীনল্যান্ডের রয়েছে নিজস্ব পার্লামেন্ট। তবে তাদের সরকারের ক্ষমতা সীমিত।

গ্রিনল্যান্ডের ৮০ শতাংশ এলাকা বরফে ঢাকা। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে যেভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে, তাতে অনেক এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। এতে করে গ্রিনল্যান্ডের খনিজ সম্পদ আহরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

 

টাইমস/এএইচ/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
যেভাবে মুস্তাফিজ থেকে ‘ফিজ’ নামটা এলো May 19, 2024
img
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্যপদ ফিরে পেলেন জায়েদ খান May 19, 2024
img
মে মাসের ১৭ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৩৬ কোটি ডলার May 19, 2024
img
আছড়ে পড়ল ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার May 19, 2024
img
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম May 19, 2024
img
মেট্রোরেলে ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত ভুল: ওবায়দুল কাদের May 19, 2024
img
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি কোনো শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়নি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 19, 2024
img
রুমায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত May 19, 2024
img
মিরপুরে পুলিশ-অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষ May 19, 2024
img
“দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকে আরো ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন “ - শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল May 19, 2024